পাঁচ বছর পর ওপার বাংলায় কনসার্ট করলেন ‘গুরু’ জেমস। নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে মাতালেন দর্শককে। নিজের খেয়ালে নিজের মতো গান করেছেন ‘নগরবাউল’ খ্যাত জেমস। ‘পুজোওয়ালাদের গান-পুজো’ শীর্ষক এই কনসার্টের আয়োজন করেছে কলকাতার সংগঠন ফোরাম ফর দুর্গোৎসব।
মঞ্চে গাওয়ার আগে সবাইকে ভালোবাসা জানিয়ে জেমস বলেছেন, ‘লাইভ পারফরম্যান্স একজন শিল্পীকে এগিয়ে নিয়ে যায়।’
আনন্দবাজার পত্রিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জেমস বলছেন, তার মনে হয এখনো হয়তো কোনো সন্ধ্যায় হুট করে আইয়ুব বাচ্চু তাকে ফোন দিতে পারেন। জানালেন দুই বাংলার কাদের গান তাকে অনুপ্রেরণা জোগায়। বললেন, কেন বলিউডে থেকে গিয়ে গাইলেন না।
আনন্দবাজারকে দেয়া এক সাক্ষাৎকার হুবহু একাত্তরের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
আ.বা: পাঁচ বছর পর কলকাতায় কনসার্ট। কোন স্মৃতি নিয়ে ফিরলেন?
জেমস: কলকাতা সবসময় নিজের দেশ মনে হয়।
আ.বা: ক্লাস এইটে গানের জন্য বাড়ি ছেড়েছিলেন। অনিশ্চয়তার ভয় পাননি?
জেমস: না। কখনো ওরকম…। একটা ঘোর আরকি। ঘোরের মধ্যে চলছে।
আ.বা: ‘ফিলিংস থেকে ‘নগরবাউল’- এই সফরে কোনো আক্ষেপ রয়েছে?
জেমস: না। সংগীতে কোনো আক্ষেপ নেই আমার। না। কোনো আক্ষেপ নেই।
আ.বা: ‘নগর বাউল’ এর আকাশছোঁয়া সাফল্য। প্রথম ব্যান্ড ‘ফিলিংস’ কি আজও রয়ে গিয়েছে মনের গভীরে?
জেমস- তা তেমন কিছু না। সেটা শুরু ছিলো। ওটা একটা শেখার সময় ছিলো। তখন আমরা কাভার মিউজিক করতাম। ক্লাবে বাজাতাম।
আ.বা: সাইকেডেলিক রক না হার্ড রক?
জেমস- আমি কিন্তু কখনো ওভাবে ভাবিনি যে কী করছি। রক না সাইকেডেলিক। তোমরা বলছো। আমি আমার মতো করে গান করার চেষ্টা করেছি। তারপরে দর্শকরা-শ্রোতারা কেউ সাইকেডেলিক বলছে কেউ রক-ফিউশন বলছে।
আ.বা: বাংলাদেশ বা ভারতে হার্ড রক কি শুধুই নতুন প্রজন্মের, কী মনে হয়?
জেমস: নতুন প্রজন্ম বলা যাবে না। বলতে ইয়াং জেনারেশন। আমার মনে হয় রকটা তারা… তবে এখন পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। এখন আমার বয়সী মানুষকেও দেখি মাঝে মাঝে।
আ.বা: বিদেশে আপনার বয়সী শ্রোতা আকছার দেখা যায়। কিন্তু বাংলাদেশ বা ভারতে সেই সংখ্যাতো অনেকটাই কম।
জেমস- না না থাকে। ওরা থাকে। যখন আমরা শুরু করেছিলাম তখন তারা ইয়াং ছিলো। তারা এখন আসে। মাঝে মাঝে অতীতকে মনে করার জন্য আসে।
আ.বা: বলিউডে আর গান গাইলেন না কে? মাতৃভূমি ছেড়ে থাকতে হবে তাই?
জেমস- এটা একটা কারণ। আরেকটা কারণ আছে। আমাকে যখন ডাকা হলো, তখন আমাকে আরও স্ট্রগাল মানে আরও চর্চা করা আরও…ওই এনার্জিটা আমার ছিলো না। আমি ফ্রি ফর মিউজিক করি। বলিউডে করতে হলে তোমাকে সেইভাবে করতে হবে। ইয়াং বয়সে হয়তো স্ট্রাগলটা কম হতো। তখন হয়তো…।
আ.বা: অনুরাগীতো বটে, অন্য শিল্পীদের কাছেও আপনি ‘গুরু’। বাংলাদেশ ও কলকাতার কোন শিল্পীদের পছন্দ?
জেমস- ফসিল, রুপম। আরও আগের অঞ্জন, সুমন। আমাদের দেশে আজম খান, আইয়ুব বাচ্চু… মাকসুদ আছে মাইলস আছে। এদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা আসে।
আ.বা: শিলাজিতের গান কেমন লাগে?
জেমস- ওভাবে গভীরভাবে শোনা হয়নি। তবে চন্দ্রবিন্দু শোনা হয়েছে।
আ.বা: প্রেম না কি বিরহের গান?
জেমস: প্রেম না থাকলেতো গান হবে না। প্রেম থাকতেই হবে।
আ.বা: নিউ ইয়র্কের কনসার্টে প্রেম, তারপর বিয়ে। অনুরাগীদের কাছ থেকে প্রেমের প্রস্তাব আসে নিশ্চয় এখনো?
জেমস: নাহ… এখন আর কি…। প্রেম সবসময় আছে। প্রেম সবসময় থাকবে। প্রেম ছাড়া কোনো সংগীত বা সৃষ্টি হতেই পারে না।
আ.বা: আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুর রাতে কনসার্টে কান্না। কোনো বিশেষ স্মৃতি রয়েছে?
জেমস: উনি এখনও জীবিত আমার কাছে। মনে হয় যে, সন্ধ্যায় আবার ফোন দিয়ে বসবে। উনি যে নেই, এই ব্যাপারটা আমি মাথায় রাখতে চাই না। এটা আমাকে ডিস্টার্ব করে।
আ.বা: সিনেমায় গান গাওয়া ছাড়া বর্তমানে স্বতন্ত্র ব্যান্ড নিয়ে আত্মপ্রকাশ করা কি কঠিন হয়ে উঠছে?
জেমস: ভারতে এটা একটু কঠিন। আমাদের ওখানে ফিল্মতো কেবল কিছু একটা হচ্ছে। এখানে ফিল্মতো বড় একটা ব্যাপার। এই অঞ্চলে (পশ্চিমবঙ্গ) ফিল্মটা ইম্পর্টেন্ট।
আ.বা: নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের কী পরামর্শ দেবেন।
জেমস: জাস্ট গান করে যেতে হবে। লাইভ করো। মঞ্চ, মঞ্চ, মঞ্চ।