ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ফল আসতে শুরু করার পরই দেশটির রাজনীতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেতে শুরু করেছে। শুরু হয়ে গেছে নতুন হিসাব, নতুন সমীকরণ। একটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে গেছে একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা পাচ্ছেন না নরেন্দ্র মোদী দল বিজেপি। ফলে সরকার গঠনে জোটের উপরই নির্ভর করতে হবে।
লোকসভা ভোটের ফল এখন যেভাবে এগুচ্ছে, তাতে বিজেপির এককভাবে ৩০০ আসনের স্বপ্ন এখন এক বড় দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠেছে। সব মিলিয়ে ২৫০ আসন পায় কি-না তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। যাকে গত ১০ বছর ধরে ভারতজুড়ে উগ্র হিন্দুত্ববাদ ছড়িয়ে দেয়ার অপরাজনীতির নির্মম পরিহাস হিসাবে দেখা হচ্ছে।
পাঁচ বছর আগে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ৩০৩টি আসন পেয়েছিলো বিজেপি। মনে করা হয়, সেই সময় বিজেপির পক্ষে কাজ করেছিলো মোদী ম্যাজিক এবং কট্টর জাতীয়তাবাদী হাওয়া। বিশেষ করে উগ্র হিন্দুত্ববাদের বিকাশ ঘটিয়ে পুরোপুরি ফয়দা লুটেছিলেন বিজেপি নেতারা।
পাঁচ বছর পরে অবশ্য নরেন্দ্র মোদীর সেই ম্যাজিক এখন অনেকটাই ফিকে। তাই এক ধাক্কাতেই বিজেপির আসনসংখ্যা নেমে এলো ২৪০ এর কম-বেশি। নিজের বারাণসী কেন্দ্র থেকে অবশ্য জয় পেয়েছেন মোদী। তবে গতবারের তুলনায় মোদীর জয়ের ব্যবধান কমেছে প্রায় সাড়ে তিন লাখ।
অর্থাৎ, মোদীর নিশ্চয়তা বা গ্যারান্টি আর কাজ করছে না বলেই মনে করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে উগ্র হিন্দুত্ববাদের টোটকা পাল্টা আঘাত করেছে গেরুয়া শিবিরে, তেমনটাও ভাবা হচ্ছে। বলা হচ্ছে রাজনীতিতে ধর্ম নিয়ে আসার বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন ভারতের তৃণমূল মানুষেরা।
এবার ৪০০ আসন পাওয়ার লক্ষ্য নিয়েই এবার লোকসভা নির্বাচনে লড়তে নেমেছিলো বিজেপি। স্লোগান উঠেছিো, ‘আব কি বার, চারশো পার’। তবে কার্যক্ষেত্রে আড়াইশ’র ঘরও পেরোতে পারলো না বিজেপি। এমনকি বিনামূল্য রেশন দেয়ার মোদীর প্রতিশ্রুতিও ভোটযুদ্ধে কাজে আসেনি।
অক্লান্ত পরিশ্রম করে দেশের অধিকাংশ কেন্দ্রে গিয়েই প্রচার করেছেন মোদী। দ্বিতীয় দফার ভোটের পর অবশ্য মোদীর প্রচারে এসেছিলো ধর্মীয় অনুষঙ্গও। ‘নবরাত্রিতে মাংস খাওয়ার অভ্যাস’ নিয়ে বিরোধীদের কটাক্ষ করেছিলেন তিনি। কংগ্রেসের ইশতেহার মুসলিম প্রভাবিত বলেও কটাক্ষ করেন মোদী।
রাহুল গান্ধী, মল্লিকার্জুন খড়গদের দলকে আক্রমণ করে নরেন্দ্র মোদীকে বলতে শোনা গেছে, কংগ্রেসের নজর আপনার সম্পত্তির উপরে রয়েছে। ক্ষমতায় এলে এরা মা-বোনেদের মঙ্গলসূত্র ছিনিয়ে নেবে। সবার স্বর্ণালঙ্কার কেড়ে নেয়া হবে। এমন প্রচারণাকে উল্টো কাজে লাগিয়ে সফল হয়েছে কংগ্রেস।
বিজেপির ‘সংকল্পপত্রে’ এক দেশ এক ভোট, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো বিজেপি। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পদ্মশিবির তাদের এই লক্ষ্যগুলো কতটা পূরণ করতে পারবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। দেশে মোদী সরকার থাকলেও, মোদীর প্রতি মানুষের ঢালাও সমর্থনে বেশ ভাটা পড়েছে।
অনেকেই ভারতের এবারের লোকসভা নির্বাচনকে মোদীর কয়েক দশকের প্রধানমন্ত্রীত্বের ওপর গণভোট হিসাবেই দেখেছেন। যে প্রধানমন্ত্রীত্বের আমলে মোদী ভারতে জনজীবনের বিভিন্ন বিষয়ে রূপান্তর ঘটিয়েছেন। সেদিক থেকে এবারের ভোটের ফলে গোটা ভারতজুড়েই বিজেপি বিষন্ন।
বিজেপি সদরদপ্তরে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলেও কোনও জৌলুস দেখা যাচ্ছে না। মোদী-মোদী স্লোগানে মুখরিত হলেও লক্ষ্য পূরণ না হওয়ার ব্যর্থতা বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বিজেপি’র জয় উদযাপন অনুষ্ঠানে। সোশ্যাল মিডিয়ায় কেবল একটি ছোট পোস্ট করে জনতাকে ধন্যবাদ দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী।