ইউক্রেন সংঘাতের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগে থাকা তিনটি দেশের মধ্যে ভারতে অন্যতম হিসেবে উল্লেখ করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আর রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট সমাধানে ওই তিন দেশের আন্তরিক প্রচেষ্টার কথাও স্বীকার করেছেন তিনি।
আড়াই বছর যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পর এখন ইউক্রেনের সঙ্গে সমঝোতার পথ খুঁজছে রাশি। বৃহস্পতিবার ভ্লাদিভস্তকে ইস্টার্ন ইকোনমিক ফোরামের (ইইএফ) দেওয়া বক্তৃতায় ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, যদি ইউক্রেনের আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা থাকে, তবে আমি এটি সহজতর করতে পারি।
পুতিন এমন সময় এই আলোচনার অবতারণা করলেন, যখন কয়েক সপ্তাহ আগেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ইউক্রেনে ঐতিহাসিক সফর এবং দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
তিন দেশের নাম উল্লেখ করে ইস্টার্ন ইকোনমিক ফোরামে বলেন, এই বিরোধ সমাধানে যারা সত্যিকার অর্থে কাজ করছে আমাদের সেই বন্ধু ও অংশীদারদের আমরা সম্মান করি; বিশেষ করে চীন, ব্রাজিল ও ভারত। আমি এই বিষয়ে আমার তাদের সঙ্গে ক্রমাগত যোগাযোগ করছি।
২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুর দিকে সংঘাত বন্ধে আলোচনার প্রসঙ্গ তুলে পুতিন বলেন, রাশিয়া কখনোই শান্তি আলোচনার বিরোধিতা করেনি। সেটা সংঘাতের শুরু থেকেই।
তিনি বলেন, আমরা কি তাদের (ইউক্রেন) সাথে আলোচনা করতে প্রস্তুত? কখনোই তো এটি প্রত্যাখ্যান করিনি। তবে কিছু ক্ষণস্থায়ী দাবির ভিত্তিতে নয়। আলোচনা হতে হবে ইস্তাম্বুলে হওয়া সেই সম্মতি ও নথিগুলির ভিত্তিতে।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সংঘাত সমাধানে ভূমিকা রাখতে পারেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কারণ, সব পক্ষের সঙ্গেই তার যোগাযোগ রয়েছে।
এক বিবৃতিতে রাশিয়ান প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ইউক্রেনে সংলাপের সুবিধার্থে ভূমিকা রাখতে পারে ভারত। মোদী ও পুতিনের মধ্যে রয়েছে 'অত্যন্ত গঠনমূলক ও বন্ধুত্বপূর্ণ' সম্পর্ক।
পেসকভ বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী বিরোধে সরাসরি জড়িতদের কাছ থেকে সরাসরি তথ্য পেতে পারেন। কারণ, তিনি পুতিন, জেলেনস্কি ও আমেরিকানদের সঙ্গে অবাধ যোগাযোগ রক্ষা করেন।
আর এই প্রভাব কাজে লাগিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনকে বৃহত্তর রাজনৈতিক ইচ্ছা গ্রহণ করতে এবং শান্তি আলোচনার দিকে এগিয়ে যেতে নরেন্দ্র মোদী উৎসাহিত করতে পারেন বলেও মনে করছেন পুতিনের মুখপাত্র।
তবে তিনি এও বলেছেন যে, চলমান সংঘাত মধ্যস্থতা করার জন্য নরেন্দ্র মোদীর কাছে বর্তমানে নির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা নেই। পেসকভ বলেন, এই মুহূর্তে, সংঘাত বন্ধের উদ্যোগ আসার সম্ভাবনা নেই। কারণ, আমরা আলোচনার উপযোগী কোনো শর্ত এখন আমরা দেখছি না।
গত ২৩ আগস্ট ইউক্রেন সফরের সময় জেলেনস্কিকে রাশিয়ার সাথে সরাসরি আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। তিনি উভয় দেশের মধ্যে যুদ্ধের অবসান ঘটাতে আর দেরি করা উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেছিলেন। মোদী নিশ্চিত করেছিলেন যে, যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলটিতে শান্তি পুনরুদ্ধারে সক্রিয় ভূমিকা নিতে প্রস্তুত রয়েছে ভারত।
সম্প্রতি নরেন্দ্র মোদীর নয় ঘণ্টার ইউক্রেন সফর ছিলো ঐতিহাসিক। ১৯৯১ সালে দেশটির স্বাধীনতার পর প্রথম কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী সেদেশ সফর করেন। অবশ্য ওই সফরে কয়েক সপ্তাহ আগেই পুতিনের সঙ্গে মোদীর বৈঠক হয়, যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলো পশ্চিমা কয়েকটি দেশ।
কিয়েভে জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনায় নরেন্দ্র মোদী আশ্বস্ত করেন যে, সংঘাতের শুরু থেকেই শান্তি প্রক্রিয়া সমর্থন করেছে ভারত। এছাড়া এই সংকটের একটি সমাধান খুঁজে পেতে ব্যক্তিগতভাবে অবদান রাখারও ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি।