পেহেলগামকাণ্ডে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে জমে উঠে বাকযুদ্ধ। নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদ থেকে প্রতিদিনই শোনা যাচ্ছে রণহুঙ্কার। ভয়াবহ নেই সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে আবারও মুখ খুলেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং পাকিস্তানের প্রধান শেহবাজ শরিফ। এতে করে চলমান উত্তেজনার পালে হাওয়া লেগেছে।
কাশ্মীর হামলা নিয়ে রোববার ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে মুখ খুলেছেন নরেন্দ্র মোদী। এই সন্ত্রাসবাদী হামলার পর গোটা দেশকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে তাঁর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, পেহেলগাম হামলার নেপথ্যে যারা রয়েছে তারা কঠোরতম শাস্তি পাবে।
ভারতবাসীর উদ্দেশ্যে মোদী বলেন, পেহেলগাম হামলার প্রভুদের হতাশা ও কাপুরুষতার পরিচয় স্পষ্ট করে দিয়েছে। কাশ্মীরে শান্তি ফিরে আসছিলো। স্কুল ও কলেজে প্রাণচাঞ্চল্য ছিলো, উন্নয়নমূলক কাজের অভূতপূর্ব গতি ছিলো, গণতন্ত্র শক্তিশালী হচ্ছিলো, পর্যটকদের সংখ্যা রেকর্ডহারে বাড়ছিলো এবং তরুণদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছিলো। জম্মু-কাশ্মীর তথা দেশের শত্রুরা, এটা পছন্দ করেনি।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর দাবি, ২২ এপ্রিলের হামলা প্রতিটি ভারতীয়কে যন্ত্রণা দিয়েছে, তা সে যে রাজ্যেরই লোক হোক, বা যে ভাষাতেই কথা বলুক না কেন। আমি মনে করি সন্ত্রাসী হামলার ছবি দেখে প্রতিটি ভারতীয়ের রক্ত ফুটছে।
সমগ্র বিশ্ব ভারতের সঙ্গে রয়েছে বলে জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। বলেছেন, ন্যায়বিচার মিলবেই, শোকাহত পরিবারগুলোকে আশ্বস্ত করছি। এ হামলার নেপথ্যে যারা রয়েছে তারা কঠোরতম শাস্তি পাবে। সন্ত্রাসবাদীরা এবং তাদের প্রভুরা এই ষড়যন্ত্র করেছিল, কারণ তারা কাশ্মীরকে ধ্বংস করতে চায়।
সঙ্কটের মুহূর্তে গোটা দেশকে এক থাকার পরামর্শ দিয়ে মোদী বলেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে ১৪০ কোটি ভারতীয়র ঐক্যই সবচেয়ে বড় শক্তি। এই ঐক্যই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের সিদ্ধান্তমূলক যুদ্ধের ভিত্তি। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য আমাদের আদর্শকে শক্তিশালী করতে হবে। একটি জাতি হিসেবে আমাদের ইচ্ছাশক্তি প্রদর্শন করতে হবে। সমগ্র বিশ্ব দেখছে দেশ কীভাবে এক কণ্ঠে কথা বলছে।
এদিকে, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ভারত যদি উত্তেজনা ছড়ায়, তাহলে আমাদের কেউই থামাতে পারবে না। তিনি বলেছেন, পুরো পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। ভারত যদি উত্তেজনা ছড়ায় তাহলে আমরা পুলওয়ামার ঘটনায় যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলাম ঠিক সেভাবে মোদীর সরকারকে কঠোর জবাব দেওয়া হবে।
খাজা আসিফ সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, পারমাণবিক শক্তিধর দুই রাষ্ট্রের যেকোনও সংঘাত আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হুমকি হয়ে উঠবে। তিনি বলেন, এই বিষয়টি বিশ্ব সম্প্রদায়ের নজরে আনা হয়েছে। তারা পেহেলগামের এই ঘটনায় তদন্ত শুরু করতে পারে।
ভারতকে সতর্ক করে দিয়ে পাকিস্তানের এই প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘উত্তেজনা যদি বাড়তে থাকে, তাহলে কেউই আমাদের থামাতে পারবে না। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যদি উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলার পথ বেছে নেন, তাহলে আমরা তাকে পুরো পথে তাড়া করব।
খাজা আসিফ বলেন, মোদী পুলওয়ামার সময় ব্যবহৃত একই কৌশলের পুনরাবৃত্তি করে মিথ্যা প্রচারণার জন্য পরিচিত। তবে পাকিস্তান কার্যকরভাবে প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার কাশ্মিরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৫ ভারতীয় ও এক নেপালি নাগরিকের প্রাণহানির ঘটনার পর ভারতের পক্ষ থেকে বুধবার বেশ কিছু কূটনৈতিক ব্যবস্থা নেয়া হয়। ভারতের এমন পদক্ষেপের পর পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি (এনএসসি) জরুরি বৈঠকে ভারতের বিরুদ্ধে প্রায় একই ধরনের পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দেয়।