শুধু রকেট বা বোমা নয়, ইসরাইল দীর্ঘদিন ধরে গাজার ফিলিস্তিনিদের ওপর অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষকেও। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তীব্র চাপের মুখে খুব সামান্য ত্রাণ গাজাবাসীর মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে। কিন্তু সে ত্রাণ নিতে যাওয়া চরম ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদেরও এখন নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করছে ইসরাইলি সেনারা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ সত্ত্বেও থামছে না এ নৃশংসতা।
গাজার নাসার হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন চার সন্তানের বাবা সুহাইব আবু তায়ের। দীর্ঘদিন অনাহারে থাকা সন্তানদের জন্য ত্রাণ নিতে গিয়ে ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন তিনি। বহুদিন থেকে ক্ষুধার্ত তায়েরের বোন আসমা আবু সালাহও। ক্ষুধার্ত মানুষকে খাবার দেয়ার কথা বলে হত্যা করায় তীব্র ক্ষোভ জানান তিনি।
সুহাইব আবু তায়ের বলেন, বাচ্চাগুলো না খেয়ে মারা যাওয়ার দশা, কোন বাবা চোখে এসব দেখে সহ্য করতে পারে? বাচ্চাদের জন্য সামান্য পানি আর খাবার আনতে গিয়েছিলো। কি অপরাধ ছিলো তার যে এক টুকরো রুটি না দিয়ে বরং তাকে গুলি করা হলো?
একই রকম মর্মান্তিকতার শিকার নাবিলা আল নাজ্জার নামের এই ফিলিস্তিনি নারী। নাতজারিম কোরিডোরে ত্রাণ নিতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন তার স্বামী।
নাবিলা আল নাজ্জার বলেন, বাচ্চারা ক্ষুধায় ঘুম ভেঙে কান্না করছে। না খেয়ে কতদিন মানুষ বাঁচতে পারে। ত্রাণ নিতে যাওয়া মানুষের ওপর ইসরাইল গুলি চালাচ্ছে, আমরা আগেই শুনেছি। তারপরও বাচ্চাদের বাঁচাতে সেখানে ঝুঁকি নিয়ে যান ওদের বাবা। তার খাবারের বদলে ফিরে আসে রক্তাক্ত হয়ে।
ত্রাণ নিতে গিয়ে ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে আহত হওয়া মানুষে পূর্ণ হয়ে গেছে গাজার হাসপাতাল। খান ইউনুসের একটি হাসপাতালে কর্মরত ব্রিটিশ সার্জন ভিক্টোরিয়া রোজ জানান, সেখানকার পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক।
ভিক্টোরিয়া রোজ বলেন, গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র একটা প্রহসন। সেখানে খাবার পানি দেয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে ফিলিস্তিনিদের গুলি করা হচ্ছে। প্রতিদিনই শত শত মানুষ সেখানে গিয়ে হতাহত হয়ে হাসপাতালে আসছে। ওষুধের অভাবে তাদের চিকিৎসাও করতে পারছি না আমরা।
ইতোমধ্যেই গাজাকে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুধার্ত স্থান বলে ঘোষণা দিয়েছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি জানিয়েছে, গাজার অন্তত ১০ লাখ শিশু বর্তমানে ভয়াবহ অপুষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছে। বাস্তব চিত্র আরও ভয়াবহ। বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজায় দুর্ভিক্ষ বহু আগেই শুরু হয়ে গেছে, বিশ্ববাসী শুধু চোখ বন্ধ করে আছে।