মরিয়ম নওয়াজ এক নারী পুলিশ অফিসারের দোপাট্টা মাথা থেকে পিছলে যাওয়ার পরে তা ঠিক করে দেন এবং মুহূর্তটির ভিডিও তার জনসংযোগ দল ইনস্টাগ্রাম এবং টুইটারে শেয়ার করার পর নেটদুনিয়ায় বিতর্কিত হন পাঞ্জাবের নয়া মুখ্যমন্ত্রী।
‘সহানুভূতি ও বোঝার মুহূর্ত’ ক্যাপশনে শেয়ার হওয়া ভিডিওটি শীঘ্রই ভাইরাল হয়ে যায়। ইন্টারনেটে তার এমন আচরণ সমর্থনের সাথে সাথে একদল মরিয়মের বিরুদ্ধে ওই অফিসারের ব্যক্তিগত স্থান আক্রমণ করে তাকে অস্বস্তিতে ফেলে দেয়ার অভিযোগ তোলেন।
ভিডিওটির বিরোধিতাকারী অনেকে অভিযোগ করেন যে মরিয়ম ‘নৈতিক পুলিশিং’ চালিয়ে যাচ্ছেন, যা ‘খুবই ভুল’ আচরণ। কেউ কেউ ‘কথা ও কাজের চেয়ে ব্যক্তির পোশাকি উপস্থাপন’ বেশি গুরুত্বপূর্ণ করে দেখারও অভিযোগ করেছেন তার বিরুদ্ধে।
এছাড়াও একদল মরিয়মের পুলিশ অফিসারের মাথার স্কার্ফ ঠিক করে দেয়াকে তার ‘ধর্মীয় গোঁড়ামি’ হিসেবে দেখেন। তারা এও উল্লেখ করেন যে এ ঘটনা অন্য ধর্মান্ধদের জন্য নারীদের সাথে একইরকম আচরণ করার পথ তৈরি করেছে এবং নারীরা ধর্মান্ধদের জন্য একটি বরাবরই একটি ‘নরম লক্ষ্য’।
নেটিজেনরা উল্লেখ করেছেন যে মরিয়মের ‘এ ধরণের কিছু করার দরকার নেই’ কারণ ‘দোপাট্টা ঠিকঠাক করা মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তার কাজ নয়’।
মরিয়ম সমর্থকরা অবশ্য বলেন যে, তিনি হিজাব বা কারও মাথা ঢেকে রাখার বিষয়ে কোনো ‘জবরদস্তি’ করেননি, বরং ওই অফিসার ইতোমধ্যেই তার মাথা ঢেকে রেখেছিলেন এবং মুখ্যমন্ত্রী কেবল ‘সেটি ঠিক করছেন’ কারণ এটি পর্দানশীল নারীদের জন্য ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ’ বিষয়। তার এমন আচরণকে ‘সম্মান ও সুরক্ষা’র প্রতীক হিসেবেও উপস্থাপন করেন তারা।
বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে পিএমএল-এন নেত্রী আজমা বোখারি বলেছেন, কাজ করার সময় পুলিশ অফিসারের দোপাট্টাটি পড়ে গিয়েছিল এবং মরিয়ম ‘মা-বোনসুলভ কোমলতা’ থেকে এটি ঠিক করে দিয়েছিলেন, যেমনটি কেউ তাদের ‘সন্তানদের’ জন্য করে থাকে।
‘একটি ভালো আচরণকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা হয়েছে’ অভিযোগ করে বোখারি বলেন, ‘মাথা ঢেকে রাখার পবিত্রতা শুধুমাত্র যাদের মা, কন্যা ও বোন রয়েছে, তারাই বুঝবেন।’
আশ্চর্যজনকভাবে, মরিয়ম নওয়াজসহ সমস্ত রাজনীতিবিদ সভা-সমাবেশে নারীদের তাদের ‘কন্যা, মা এবং বোন’ বলে সম্বোধন করেন, সকল নারীদের (ফুলস্টপ) উল্লেখ না করে। যদিও এটি সহানুভূতি জাগানোর জন্য একটি কার্যকর কৌশল হতে পারে, তবে এ ধরনের ফ্রেমিং একটি সীমাবদ্ধতাও কারণ এটি তাদের সক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তি হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিবর্তে তাদের পারিবারিক পরিচয়কে গুরুত্ব দেয়, যা তাদের অবদানকে খাটো করে।
এ ঘটনার রেফারেন্স নিয়ে ধরুন, মরিয়ম ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ব্যক্তি এবং ওই অফিসারের সমতুল্য বা আত্মীয় নন, যা এ আচরণকে কিছুটা অদ্ভুত করে তোলে। কল্পনা করুন, আপনার বস (বসের বসের বস) আপনার কাছে এসে আপনি যা পরেছেন, তা ঠিক করে দিচ্ছেন!
ওই অফিসার বা মরিয়মের উদ্দেশ্য বিচার করার আমরা কেউ নই, তবে ভিডিওটি ১১ হাজারের বেশি শেয়ার করা হয়েছে, সে সম্পর্কে আমাদের কিছু চিন্তাভাবনা আছে। উল্লেখ্য যে, দ্য ডনের ইমেজেস-এ নিবন্ধটি প্রকাশের সময় ভিডিওটি এক্স-এ (সাবেক টুইটার) পাঁচ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর হয়তো ‘ভাল উদ্দেশ্য’ থাকতেও পারে, তবে তার জনসংযোগ দল ভিডিওটি ‘সহানুভূতি এবং বোঝাপড়া’ হিসাবে চিহ্নিত করে তা বিকানোর সক্রিয় সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এটাকে এভাবে পাবলিক করার ফলেই বিষয়টি জনসাধারণের আলোচনায় পরিণত হয়।
কারও প্রতি সত্যিকারের সমবেদনা, বিশেষ করে যদি তিনি হিজাবি হন, তাহলে তার গোপনীয়তা এবং সম্মতিকে প্রথমে রাখতে হবে। এটা অত্যন্ত আশ্চর্যের যে, ‘টিম মরিয়ম’ কি ওই অফিসারের স্পষ্ট সম্মতি নিয়েছিল তার দোপাট্টা পড়ে যাওয়ার এবং তার খোলা মাথার ভিডিওটি পুরো বিশ্বের ভিডিও শেয়ার করার জন্য, বিশেষ করে যখন তারা জোর দিচ্ছে যে অফিসার ইতোমধ্যে তার মাথা ঢেকে রেখেছেন এবং তাকে এজন্য মরিয়ম বাধ্য করেনি।
একজন পর্দানশীল মহিলার বেপর্দাগি যদি পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর অবিলম্বে নজর দেয়ার জন্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতি হয়, তাহলে ভিডিওটি কি এক্সে শেয়ার করা উচিত ছিল?
সম্ভবত এটি সবচেয়ে ‘সহানুভূতিশীল’ আচরণ হতো যদি ভিডিওটি মোটেও শেয়ার না করা হতো এবং কারো মাথা ঢেকে রাখার ‘পবিত্রতা’ একটু গোপনীয়তার সাথে সংরক্ষণ করা হতো। ভিডিওটি অনলাইনে শেয়ার করার ‘পাবলিসিটি স্টান্ট’ কিছুটা ভুল হয়ে গেছে। উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন, সব কিছু সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা উচিত নয়, এমনকি যদি আপনি একটি প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীও হন এবং বিশ্বাস করেন যে আপনি ‘সঠিক কাজ’ করছেন। আপনি যদি সত্যিই মহিলার যত্ন নেন তবে তাকেই প্রথমে রাখুন।