পরপর দুটি তেলের জাহাজের আগুনের ঘটনা নাশকতা, নাকি দুর্ঘটনা সেটি খতিয়ে দেখছে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়। এই ঘটনায় কেউ দোষী থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানালেন নৌ পরিবহন উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন। চট্টগ্রাম শিপিং কর্পোরেশনে বৈঠক শেষে তিনি এ কথা জানান।
রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর বন্দর এলাকায় বিএসসির প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি আরও বলেন, পর পর বিএসসির (বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন) দুটি জাহাজ দুর্ঘটনার পর সন্দেহ যাতে দূর হয় বা প্রকৃত ঘটনা বের করে আনার জন্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে একটি উচ্চ পর্যায়ের আলাতা তদন্ত কমিটি করা হবে। ১০ সদস্যের এ তদন্ত কমিটিতে বিশেষজ্ঞরা থাকবেন।
তিনি বলেন, কমিটির সদস্যরা এখানে আসবেন, তদন্ত শুরু হবে, জাহাজগুলো দেখবেন। সন্দেহজনক কিছু আছে কি না- কী হয়েছে সে বিষয়ে অনুমানভিত্তিক কথা বলতে চাই না। আপনারা অনুসন্ধান পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। অনুসন্ধান রিপোর্ট হাতে পেলে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
৩৭ বছর ধরে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিবহন করে তেল খালাসের সময় পুড়ে যায় রাষ্ট্রায়ত্ত শিপিং কর্পোরেশনের দুটি জাহাজ- বাংলার জ্যোতি ও বাংলার সৌরভ। বিপিসির আমদানি করা তেল গভীর সমুদ্র থেকে খালাস করে চট্টগ্রাম বন্দরের ডলফিন জেটিতে আনার কাজ করত জাহাজ দুটি।
সাধারণত তেলের জাহাজের আয়ু ২৫ বছর ধরা হলেও এই দুই জাহাজ রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে অপারেশনে রাখা হয়। ৩০ সেপ্টেম্বর সকালে ডলফিন জেটিতে তেল খালাসের সময় পুড়ে যায় বাংলার জ্যোতি। পাঁচ দিন পর ৪ অক্টোবর মাদার ভেসেল থেকে তেল নিয়ে ফেরার পথে পুড়ে যায় বাংলার সৌরভ। দুই জাহাজে আগুনে মারা গেছে চার জন। দুই জাহাজে প্রায় ২৩ হাজার মেট্রিক টন অপরিশোধিত তেল ছিল।
বিপিসির ক্রুড লাইটারিংয়ে সমস্যা হবে না জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলার সৌরভ’ জাহাজে অগ্নিকাণ্ডের পর লাইটারিংয়ের জন্য বিএসসির এমডি তাৎক্ষণিক জাহাজ ভাড়া করেছেন। এমনিতেই বাংলার সৌরভের ওটি শেষ ট্রিপ ছিল। বিএসসি থেকে বিষয়টি আগেই ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। এখন দুর্ভাগ্যজনকভাবে একটি ঘটনা ঘটে গেছে। আমার ভয় ছিল, এ তেল ব্লাস্ট হলে চ্যানেল বন্ধ হয়ে যেত। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া।
এদিকে, পরপর দুটি জাহাজ পুড়ে যাওয়ার ঘটনাকে স্বাভাবিকভাবে দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। তারা জানান, দুর্ঘটনা পরবর্তী ব্যবস্থা কি ছিলো সেটি খতিয়ে দেখতে হবে। তারা বলছেন, যেভাবেই ঘটুক সেটি খুঁজে বের করার পাশাপাশি এমন দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে কতটা পদক্ষেপ ছিলো সেটিও নিশ্চিত করতে হবে।
চারজনের মৃত্যুর পর জাহাজ দুটি পরিত্যক্ত হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে শিপিং কর্পোরেশনের জাহাজ সাত থেকে পাঁচটিতে দাঁড়ালো। জাহাজ দুটি প্রত্যাহারের পর বড় জাহাজ থেকে তেল খালাসের জন্য ৩০ হাজার টন ধারণ ক্ষমতার একটি জাহাজ ভাড়া করা হচ্ছে।