ডাকাতি ছেড়ে জঙ্গি সংগঠনকে অস্ত্র সরবরাহ করছিলো আব্দুর রহিম (৩২)। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী ছিলেন তিনি। রহিমকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছে সিটিটিসি।
বুধবার অভিযান চালিয়ে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানা এলাকায় অভিযান রহিমকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। সেসময় তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও বিস্ফোরক।
শুক্রবার সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান জানান, গ্রেপ্তার আব্দুর রহিম ২০১৯ সালের দিকে ‘রহিম ডাকাত’ গ্রুপের নেতৃত্ব দিয়ে রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলো। সম্প্রতি সে জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ কে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করে আসছিলো।
রহিম গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, সে (জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া) সংগঠনকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহের জন্য বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ির গহীন বনে ড্রামের ভেতরে মাটির নিচে লুকিয়ে রেখেছিল। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি থানাধীন ছাগল খাইয়্যা এলাকার পাহাড়ের ঢালে ঘন জঙ্গলের মধ্যে মাটির নিচে রক্ষিত অবস্থায় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-গুলিসহ বিস্ফোরক সরঞ্জামাদি উদ্ধার করে।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার ট্রেনিং ক্যাম্পের সন্ধান পাওয়া যায়। এরপর যৌথবাহিনীর অভিযান শুরু হলে গ্রেপ্তার আব্দুর রহিম একাধিকবার জঙ্গি সংগঠনগুলোকে অস্ত্র সরবরাহ করেছে। পরে আরও বেশি অস্ত্র দেয়ার কথা ছিলো, তার কিছু অংশ সে সংগ্রহ করেছিলো। যখন যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হয় তখন সে এসব অস্ত্র লুকিয়ে রাখে।
প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে শারক্বীয়ার সদস্যদের ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইজ (আইইডি) তৈরির প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। এতে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল লাগতো। সেই কেমিক্যালও সরবরাহের কথা ছিলো রহিমের। সে জঙ্গি সংগঠনে সরবরাহের জন্য মোবাইল নেটওয়ার্ক বুস্টার সংগ্রহ করেছিলো। তবে সে কীভাবে এটি সংগ্রহ করছিলো সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
সিটিটিসি প্রধান আরও বলেন, জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার মাস্টারমাইন্ড ও সংগঠনের প্রধান শামিন মাহফুজ যখন পাহাড়ে সংগঠনের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প শুরু করেন, তখন থেকে আব্দুর রহিম অস্ত্র সংগ্রহের কাজ করছিলেন। তার সঙ্গে পূর্বে গ্রেপ্তার হওয়া অস্ত্র সরবরাহকারী মো. কবির আহাম্মদ যোগাযোগ ছিলো। কবির সংগঠনের জন্য কাজ করতে রহিমকে প্রস্তাব দেন। এতে রহিম তার প্রস্তাবে রাজি হন এবং অস্ত্র সরবরাহের পাশাপাশি সংগঠনের সদস্য সংগ্রহেও কাজ করতেন।
কীভাবে তিনি এসব অস্ত্র সংগ্রহ করেছেন, তার সঙ্গে আর কে জড়িত আছে এবং কোন কোন পর্যায় থেকে সে সহযোগিতায় পেয়েছে এসব জানতে রহিমের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হবে।
সবশেষ সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, বাংলাদেশে এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে আন্তর্জাতিক জঙ্গি অবস্থান করবে। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের কারও অবস্থানের প্রশ্নই আসে না।