গেলো ৫ জুন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে আমের ওজন জটিলতা নিয়ে আলোচনা শেষে সর্বসম্মতিক্রমে কেজি দরে আম কেনাবেচার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু তিনদিন পর কমিশনের দাবির প্রেক্ষিতে পুরো জেলায় আম কেনা-বেচা বন্ধ করে দিয়েছে আড়তদাররা। সোমবার (৯ জুন) থেকে এ অচলাবস্থা বিরাজ করছে।
এতে করে আমের ভরা মৌসুমে আমচাষীরা বিপাকে পড়েছেন। গাছে আম পেকে যাবার পরও চাষীরা আম পাড়তে ভয় পাচ্ছেন। আর যারা বাধ্য হয়ে আম বাজারে নিচ্ছেন তাদের অনেকেই জিম্মি হতে হচ্ছে আড়তদারদের কাছে। কিছু আড়ত আগের নিয়মে ৫৪ কেজিতে মণ ধরে, কেউ কেউ আবার আড়তদারদের নতুন নিয়ম কেজিতে ৩ টাকা কমিশন নিয়ে আম কেনাবেচা করছেন। জেলার প্রধান আম বাজার শিবগঞ্জের কানসাট, গোমস্তাপুরের রহনপুর এবং ভোলাহাটে আমবাজারগুলোতে আমের ভরা মৌসুমেও এ জটিলতা দেখা দিয়েছে।
দেশের সর্ববৃহৎ আম বাজার চাঁপাইনবাবগঞ্জে কানসাট আম বাজারে গিয়ে দেখা যায় অধিকাংশ আড়ত আম কেনাবেচা বন্ধ রেখেছে। মঙ্গলবার বেলা ২টা পর্যন্ত এ অচলাবস্থা বিরাজ করছিলো। তবে গুটিকয়েক আড়তে কেনাবেচা চলছে। সম্প্রতি যে নিয়ম জারি করা হয়েছে তা কেউ মানছে না। উল্টো সোমবার বিকেলে শিবগঞ্জ বাজারে আড়তদারদের পক্ষ থেকে আম আড়তে বিক্রির সময় কেজি প্রতি ৩ টাকা কমিশন আড়তে জমা দেয়ার জন্য চাষীদের আহবান জানিয়ে মাইকিং করা হয়।
কানসাটের আমচাষী জাহাঙ্গির বলেন, আম পেকে যাওয়ায় কানসাটের একটি আড়তে মঙ্গলবার সকালে ১২ টাকা কেজি দরে দাম ঠিক করার পর ৩ টাকা কমিশন দিয়ে ৯ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলাম। ভ্যান ভাড়া, শ্রমিকসহ বিভিন্ন খরচ ধরলে বিক্রির চেয়ে আম গাছে পচে যাওয়ায় ভালো।
শিবগঞ্জ পৌর এলাকার আড়তদার আ. সামাদ জানান, কাঁচামাল কেজি দরে কিনে বা ৪০ কেজিতে মণ ধরে কিনে বিক্রির সময় আম কমবেই। তাই আড়তদারদের স্বার্থ দেখা উচিত ছিলো। তাছাড়া এসব সমস্যা আমের সময় কেন সামনে আনা হয় তা বোধগম্য নয়। আম মৌসুমের আগেই বসে সমাধান করতে হতো। একটি গোষ্ঠী চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম শিল্পকে ধ্বংস করতেই এ অস্থিরতা জিইয়ে রাখছে।
আমচাষী মশিউর রহমান বাবুর দাবি, একটি প্যান্টপরা সিন্ডিকেট গ্রুপ চাষি সেজে আমের সময় অস্থিরতা তৈরি করছে। এর আগেও এ গ্রুপটি অস্থিরতা সৃষ্টি করেছিলো। এরা চাষি বা আড়তদারদের শত্রু।
এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের দ্বিতীয় বৃহত্তম আমবাজার রহনপুর রেলস্টেশন আমবাজারে সোমবার সকাল থেকে আম কেনা-বেচা বন্ধ রেখেছেন চাষিরা। আমের আড়তগুলোতে সোমবার থেকে কমিশন নেয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এ কর্মসূচি পালন করছে আমচাষীরা।
আমবাজার পরিদর্শন করে দেখা গেছে, আম কেনাবেচা বন্ধ থাকায় রহনপুর-ভোলাহাট আঞ্চলিক সড়কের দুপাশে শত শত আমভর্তি ভ্যানগাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে। এতে ওই সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে গোমস্তাপুর উপজেলা আমচাষী সমিতির সভাপতি মাইনুল বিশ্বাস জানান, গত ৫ জুন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্তকে অমান্য করে স্থানীয় আড়তদাররা সোমবার থেকে কমিশন নেয়া শুরু করায় আমরা আম কেনা-বেচা বন্ধ রেখেছি। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। প্রশাসন এ বিষয়ে পদক্ষেপ না নিলে আমরা বৃহত্তর কর্মসূচিতে যাবো।
এ বিষয়ে রহনপুর আম আড়তদার সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুল আজিজ জানান, রোববার চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৪টি ও নওগাঁর ১টি আমবাজারের আড়তদাররা সভা করে সোমবার থেকে কমিশন নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আমরা কমিশনের মাধ্যমে আম ক্রয় অব্যাহত রেখেছি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির মুন্সি জানান, আমরা দুপক্ষের সাথে কথা বলে বিষয়টির সমাধান করার চেষ্টা করছি।