বিনা অনুমতিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্লুইস গেট সংলগ্ন ঝিরি পথ থেকে কাটা গাছের গুঁড়ি জব্দ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
গত বুধবার (১৮ জুন) দুপুরে ক্যাম্পাসের স্লুইস গেইটে কাটা গাছের গুড়ি ভেসে আসার সময় শিক্ষার্থীরা বিষয়টি লক্ষ করে প্রশাসনকে অবহিত করে। পরে প্রশাসন নিরাপত্তা কর্মী পাঠিয়ে গাছগুলো আটকে দেয়।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ঝুপড়ির পেছনের জঙ্গল থেকে কাটা গাছগুলো অভিনব কায়দায় ঝিরিপথ ব্যবহার করে সেগুলো জঙ্গল থেকে বের করা হয়। তবে গাছগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরের ঝিরিপথ ও স্লুইস গেট দিয়ে পরিবহন করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি না নেওয়ায় গাছগুলো জব্দ করা হয়।
এছাড়াও আইন অনুযায়ী গাছ কাটার জন্য নেওয়া হয়নি স্থানীয় বন বিভাগের অনুমতি। এভাবে অনুমতি ও ছাড়পত্র ছাড়া গাছ কেটে অবৈধ পথ হিসেবে পরিচিত ঝিরিপথে সেগুলো ভাসিয়ে নেওয়ায় জব্দ করা গাছের মালিক দাবি করা গাছ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে গাছ পাচারেরও অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট মহলে।
অভিযুক্ত ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী, ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি থেকে গাছ ক্রয় করার দাবি করলেও কোনো ধরনের প্রমাণ দেখাতে পারেননি।
স্থানীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছরই এভাবে লক্ষ লক্ষ টাকার গাছ পাচার করার উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝিরি পথ ব্যবহার করে গাছ পাচারকারী চক্র। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের বনাঞ্চলের গাছও অবৈধভাবে কেটে পাচার করতো এসব সংঘবদ্ধ চক্র। তখন থেকেই এই ঝিরিপথ অবৈধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
সূত্রগুলো আরো জানায়, প্রতিবছর শুকনো মৌসুমে গাছ কেটে ৫ থেকে ৭ ফুট সাইজের গুঁড়ি করা হয়। গাছের এ গুড়িগুলো রাখা হয় বনের ভেতর থেকে বয়ে আসা ঝিরির পাশে। বর্ষার সময় ভারী বর্ষণ হলে ঝিরিগুলো পানিতে পূর্ণ হলে এসব ঝিরি ব্যবহার করে গাছগুলো ভাসিয়ে জঙ্গল থেকে বের করে আনা হয়। এ পথে গাছ নিয়ে আসতে ব্যবহার করতে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরের স্লুইস গেট এলাকা। স্লুইসগেট এলাকা পার করে কিছুটা সামনে ইটভাটা এলাকার কোনো একটি পয়েন্ট থেকে গাছগুলো সংগ্রহ করা হয়।
অভিযুক্ত গাছ ব্যবসায়ী আলীর দাবি, তিনি মালিকানাধীন জমি থেকে শতাধিক গাছ ক্রয় করে সেগুলো চারমাস আগে কেটে রেখেছেন। বর্ষা মৌসুমে শ্রমিক খরচ বাঁচাতে ঝিরিপথে গাছগুলো ভাসিয়ে দেন। কাটা গাছ নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের স্লুইসগেট সংলগ্ন ঝিরি পথ ব্যবহার করতে অনুমতি নেওয়া ও এই পথটি অবৈধ কিনা সে ব্যাপারে অবগত ছিলেন না বলে দাবি তার।
তবে বৈধভাবে গাছ কাটার কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি ব্যবসায়ী আলী। মালিকানাধীন যে জায়গা থেকে গাছ কাটা হয়েছে আলীর অনুসারে সে জায়গার খতিয়ানে মালিকের নামও দেখাতে পারেননি তিনি। আইনানুসারে মালিকানাধীন জায়গা থেকে অধিক গাছ কাটার জন্য স্থানীয় বন বিভাগ থেকে যে অনুমতি নিতে হয় তাও নেওয়া হয়নি বলে স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত ওই ব্যবসায়ী।
এদিকে বৈধভাবে গাছ কাটা ও পরিবহনে কোনো নিয়মকানুন না মানার জন্য গাছ পাচারের সন্দেহ করছেন সংশ্লিষ্ট মহল। গাছগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাকি সরকারি জায়গা থেকে কাটা হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে আগামী রোববার গাছ কাটার স্পট ভিজিট করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. কোরবান আলী বলেন, গত বুধবার বিকেল তিনটার পরে স্লুইস গেট এলাকায় কাটা গাছ ভেসে আসার খবর পাওয়ার সাথে সাথেই সেখানে নিরাপত্তা কর্মী পাঠিয়ে গাছগুলো জব্দ করা হয়। ৪৯টি গাছের গুড়ি জব্দ হয়েছে। এর আগেও এখান দিয়ে বেশকিছু গাছের গুঁড়ি ভাসিয়ে নেওয়া হয়।
গাছ কাটার বৈধ কোনো প্রমাণ বা বন বিভাগের ছাড়পত্র না দিতে পারায় পরেরদিন ব্যবসায়ীকে গাছের জায়গার মালিক ও প্রমাণাদিসহ প্রক্টর অফিসে ডাকা হয়। তবে তিনি মালিককে নিয়ে আসতে পারেননি।
কোরবান আলী জানান, গাছের টুকরাগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা দপ্তরের আওতায় রাখা হয়েছে। আগামী রোববার গাছগুলো কোন জায়গা থেকে কাটা হয়েছে তা দেখার জন্য স্পট ভিজিটে যাওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) বলেন, গাছ ভেসে আসার খবর পেয়ে প্রাথমিকভাবে গাছগুলো জব্দ করে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে একটি মিটিং হয়েছে। বন বিভাগকে অবগত করার জন্য অফিশিয়াল চিঠি দেওয়া হবে। পরবর্তীতে যে জায়গা থেকে গাছ কাটা হয়েছে সে জায়গা ঘুরে দেখা হবে।
এর আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূরে এসব বনাঞ্চল থেকে গাছ কেটে পাচারের ঘটনা গণমাধ্যমে এসেছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের পথ ব্যবহার করে এসব গাছ পাচার হওয়ায় জরিমানাও গুনতে হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়কে।