গোটা বিশ্বকে হতবাক ও বিষ্মিত করে দেয়া এক ভয়াবহ হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসাইন আমির আব্দুল্লাহিয়ানসহ আট জন। এরই মধ্যে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন রাইসিসহ নিহত অন্যান্যরা। তবে রাইসির মৃত্যুকে ঘিরে থেমে নেই বিতর্ক। উঠছে নানা প্রশ্ন।
মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি এবং হামাস-ইসরাইল যুদ্ধে ইরানের ভূমিকা আর পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে তেহরানের সঙ্গে আমেরিকাসহ পশ্চিমাদের টানাপোড়েনের কারণে রাইসির মৃত্যুকে ঘিরে হাজির হচ্ছে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব। কারণ, রাইসির মৃত্যু শুধু একটি প্রাণহানিই নয়, মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনীতির জন্য বড় এক ধাক্কা।
তাই বহু ষড়যন্ত্রতত্ত্ব সামনে আনছেন বিশ্লেষক থেকে শুরু করে আমজনতাও। কিভাবে মারা গেলেন রাইসি? এটা কি নিছক দুর্ঘটনা নাকি ষড়যন্ত্র। সন্দেহের তীর ইরানের ঘর থেকে বাইরে। এই তালিকা থেকে বাদ পড়ছেন না কেউই। প্রিয় নেতার মৃত্যু এতো সহজভাবে মানতে নারাজ বিশ্বের মুসলিম জনতা।
তবে ইতিহাস বলে ইবরাহিম রাইসির ঘটনাই প্রথম নয়। এর আগেও ক্ষমতাসীন অবস্থায় অপঘাতে দেশটির শীর্ষ নেতাদের নিহত হবার ইতিহাস রয়েছে। সেবার হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা নয়, ভয়াবহ এক বোমা হামলায় নিহত হয়েছিলেন তৎকালীন ইরানের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন জেষ্ঠ কর্মকর্তাও।
১৯৭৯ সালে ইরানে আয়াতুল্লাহ খামেনির নেতৃত্বে সংগঠিত হয় ইসলামি বিপ্লব। তৎকালীন ক্ষমতাসীন শাহের নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন ঘটানোর মধ্য দিয়ে এই বিপ্লব পূর্ণতা পায়। পরবর্তীতে সর্বোচ্চ ক্ষমতা চলে আসে খামেনির হাতে। এই সময় ইসলামি প্রজাতন্ত্রে গঠিত হয় নতুন সরকার।
নতুন এই শাসনব্যবস্থার উপর প্রথম আঘাতটি আসে, যখন ১৯৮১ সালের ৩০ আগস্ট এক বোমা হামলায় প্রেসিডেন্ট আলী রাজাই এবং প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ বাহানোর আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত হন। তাদের ক্ষমতা গ্রহনের এক মাসেরও মধ্যেই এই ঘটনা হতবাক হয়েছিলো বিশ্ব।
সেদিন তেহরানের কাছে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে প্রেসিডেন্ট রেজাই এবং প্রধানমন্ত্রী বাহানোর অন্যান্য উচ্চপদস্থ সামরিক এবং বেসামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি বৈঠক করছিলেন। সেখানে সন্ত্রাসী সংগঠন মুজাহেদিন-ই-খলকের সদস্য মাসউদ কেশমীরি নিরাপত্তা কর্মকর্তার পরিচয়ে ঢুকে পড়েন।
চা পরিবেশনের ছলে একটি বোমাভর্তি ব্রিফকেস টেবিলের নিচে রাখে সে। কিছুক্ষণ পরেই ঘটে বিকট এক বিষ্ফোরণ। নিহত হন রেজাই ও বাহানোরসহ আরও ছয় জন। বিস্ফোরণে দু’জনের দেহ এতোটাই ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় যে, তাঁদের দাঁত দেখে মরদেহ চিহ্নিত করতে হয়।
তবে সেই ঘটনা শেষ নয়। একই বছরের মাত্র দুই মাস আগে অর্থাৎ জুন মাসেও ঘটে যায় আরও একটি বোমা হামলার ঘটনা। ইরানের ইসলামিক রিপাবলিকান পার্টি সদর দপ্তরেও বোমা হামলায় প্রাণ হারান কমপক্ষে ৭৪ জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। যাদের মধ্যে ছিলেন প্রধান বিচারপতি আয়াতুল্লাহ বেহস্তিও। যিনি সেই সময়ে ইরানের বিপ্লবের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষমতাবান ব্যক্তি ছিলেন। এই হামলার পেছনেও মুজাহেদিন-ই-খলককে দায়ী করা হয়ে থাকে। ইরান মনে করে এই জঙ্গিগোষ্ঠিটিকে লালন-পালন করে আমেরিকা।