ভারতে নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে গত ২২ এপ্রিল পেহেলগামের মনোরম তৃণভূমি বৈসরানে ভয়াবহ সন্ত্রাস হামলায় ২৬ জন নিহত হবার ঘটনা নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের উত্তজনা এখনও তুঙ্গ। হয়েছেন। সেই জঙ্গি হামলার তদন্তে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা গেছে, ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জঙ্গিরা কোকেরনাগ জঙ্গল থেকে মনোরম বাইসারান উপত্যকা পর্যন্ত প্রায় ২০ থেকে ২২ ঘন্টা দুর্গম পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়েছিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভারতীয় গোয়েন্দা সূত্রের খবর, হামলার সময় সন্ত্রাসবাদীরা দু'টি মোবাইল ফোন এক স্থানীয় বাসিন্দা এবং আরেক পর্যটকের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়। এই হত্যাকাণ্ডে চারজন জঙ্গি অংশ নেয় বলে তদন্তকারীরা। এদের মধ্যে তিনজন পাকিস্তানের নাগরিক বলে দাবি করছে দিল্লি।
অপরজন স্থানীয় জঙ্গি, আদিল থোকার। হামলায় অংশ নেয়া সবাই দ্য রেজিস্ট্যান্স ফোর্সের (টিআরএফ) সদস্য। এটিকে পাকিস্তানভিক্তিক জঙ্গি গোষ্ঠি লস্কর-ই-তৈয়বার ছায়া সংগঠন হিসাবে ধরা হয়। জম্মু-কাশ্মীরের স্বায়তশাসন তুলে নেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে টিআরএফ প্রথম প্রকাশ্যে আসে।
২০১৮ সালে উগ্রপন্থায় নাম লেখানোর পর সন্ত্রাসী গোষ্ঠি হিজবুল মুজাহিদিনে যোগদান দেয়া আদিল থোকার বৈধ কাগজপত্র ব্যবহার করে পাকিস্তানে পাড়ি জমান। সেখানে তিনি লস্কর-ই-তৈয়বা সংগঠনের সংস্পর্শে এসে যুদ্ধ-প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং ২০২৪ সালে কাশ্মীর উপত্যকায় ফিরে আসেন।
এরপর থেকে, থোকার পাকিস্তানি সন্ত্রাসীদের রসদ সরবরাহ করে এবং এই অঞ্চলে জঙ্গিদের গাইড হিসেবে কাজ করে সন্ত্রাসবাদীদের সক্রিয়ভাবে সহায়তা করে। ফরেনসিক তদন্ত নিশ্চিত করেছে যে, জঙ্গিরা হামলার সময় একে-৪৭ এবং এম-৪ অ্যাসল্ট রাইফেল ব্যবহার করেছিল।
সূত্র অনুসারে, হামলাস্থলের কাছাকাছি এক দোকানের পেছন থেকে দুই সন্ত্রাসবাদী বেরিয়ে এসে চারজনকে গুলি করে হত্যা করার আগে পর্যটকদের কলমা পাঠ করার নির্দেশ দেয়। এই আকস্মিক বর্বরতার ঘটনা আতঙ্কের সৃষ্টি করে, পর্যটকরা নিরাপত্তার জন্য চারদিকে দৌড়াতে থাকে।
একই সঙ্গে, অন্য দুই সন্ত্রাসবাদী জিপলাইন এলাকার কাছ থেকে গুলি চালায়, যা নৃশংস ভয়াবহতাকে আরও তীব্র করে তোলে। এই মামলায় একজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী হিসাবে রয়েছেন স্থানীয় এক আলোকচিত্রী। তিনি হামলার সময় একটি গাছের উপরে বসে ছিলেন। তিনি ঘটনাগুলোর ধারাবাহিকতা ক্যামেরায় ধরে রাখেন।
তদন্তকারীরা এখন তার তোলা ভিডিওগুলোকে এক করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-প্রমাণ হিসেবে খতিয়ে দেখছে। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, এরিমধ্যে তারা হামলার অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত হাতে পেয়েছেন। সেসব নিবিড়ভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হামলাকারীদের অবস্থান সম্পর্কেও তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা বা এনআইএ এখন আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্তের দায়িত্ব নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। বুধবার থেকে সন্ত্রাসবিরোধী নানা দল হামলাস্থলে অবস্থান করছে, ঊর্ধ্বতন কর্তাদের তত্ত্বাবধানে প্রমাণ অনুসন্ধান জোরদার করছে।
তারা ঘটনা পুনর্নির্মাণের জন্য প্রত্যক্ষদর্শীদের সাবধানতার সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করছে এবং সন্ত্রাসবাদীদের কার্যপ্রণালী বোঝার জন্য উপত্যকার প্রবেশ এবং বের হবার পথগুলো নিবিড়ভাবে পরীক্ষা করছে। পেহেলগাম শহরের ভেতরে ও বাইরে নিরাপত্তা ব্যবস্থার জোরদার করা হয়েছে।
ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের সহায়তায়, এনআইএ কর্তারা বৈসারন উপত্যকায় তল্লাশি চালাচ্ছে। ভয়াবহ এই হামলার জন্য সন্ত্রাসবাদীরা কীভাবে ষড়যন্ত্র করেছিল সেই রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা করছে।