চার দিন বাপের বাড়ি কাটিয়ে উমা ফিরে গেছেন স্বামীর ঘরে। কিন্তু শারদীয়ার রেশ এখনও কাটেনি। চলছে বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠান, কোলাকুলি আর মিষ্টি মুখের পালা। আর সেই অনুষ্ঠানে কলকাতায় গা ভাসালেন বাংলাদেশের অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস।
সোমবার (১০ অক্টোবর) ‘উৎসবের রঙে অপুর সাথে’ -শীর্ষক এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল কলকাতাস্থ ইন্দো বাংলা প্রেসক্লাবের তরফে, কলকাতার সিআইটি রোডে প্রেসক্লাবের অস্থায়ী ঠিকানায় বিজয়া সম্মেলনীর আয়োজন করা হয়, যে সম্মিলনীর প্রধান অতিথি ছিলেন অপু বিশ্বাস।
অনুষ্ঠানে প্রেস ক্লাবের তরফে সম্বর্ধনাও দেওয়া হয় এই জনপ্রিয় অভিনেত্রীকে। পরে এক ঘরোয়া আড্ডায় মেতে ওঠেন তিনি।
সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে তিনি কথা বলেন। তবে ছেলে আব্রাহাম খান জয়, সাবেক স্বামী শাকিব খান কিংবা শাকিব-বুলবুলি সম্পর্ক নানান প্রশ্নে দিয়েছেন কৌশলী জবাব।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রেসক্লাবের মুখপাত্র ও কোষাধ্যক্ষ দীপক দেবনাথ। পরে পরিচয় পর্ব সারেন সাধারণ সম্পাদক শুভজিৎ পুততুণ্ড।
অপুর হাতে ফুল তুলে দেন সভাপতি কিংশুক চক্রবর্তী, উত্তরীয় পরিয়ে দেন এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্য সুকান্ত চট্টোপাধ্যায়, মানপত্র তুলে দেন আহবায়ক ভাস্কর সরদার, স্মারক তুলে দেন সত্যজিৎ চক্রবর্তী এবং শুভজিৎ পুততুণ্ড। কলকাতার প্রসিদ্ধ মিষ্টির প্যাকেট তুলে দেন দীপক দেবনাথ।
এদিন ক্লাবের তরফে অপুকে ‘সাম্মানিক সদস্য’ পদ তুলে দেওয়া হয়। ফর্ম পূরণের মধ্য দিয়ে এই সদস্য পদ গ্রহণ করেন তিনি।
ইন্দো বাংলা প্রেসক্লাবের তরফে এর সংবর্ধনা ও সাম্মানিক সদস্য পদ পেয়ে আপ্লুত অপু বিশ্বাস বলেন, ‘যে সম্মান আজ দেওয়া হলো তার কতটা পাওয়ার যোগ্য তা আমি জানিনা। সেই জায়গা থেকে দেড় ঘণ্টা কেটে গেল তাও বলতে পারব না। মনে হলো বাংলাদেশের একটা টুকরো জায়গার মধ্যে বসেছিলাম। আজকে আপনাদের প্রেসক্লাবের একজন সদস্য হলাম। আমি চাই আপনাদের সঙ্গে চিরদিন থাকতে।’
এরপর ঘরোয়া আড্ডায় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি। বন্যা-মা-সন্তান পরিবার নিয়ে তিনি বলেন, বাবা -মাকে মিস করি। তাদের জন্য আমি আড়ালে কান্না করি। পৃথিবীতে বাবা-মা যে কত গুরুত্বপূর্ণ, সেটা আমি ছাড়া কেউ বলতে পারবে না। বিশেষ করে মাকে বেশি মনে পড়ে কারণ আমার ছোট্ট সন্তান তাকে আমার মাই দেখভাল করতো। মায়ের সঙ্গে আমার সন্তানের সম্পর্কটা খুব নিবিড় ছিল, তাই ব্যক্তিগতভাবে এটা আমাকে মাঝে মধ্যে কাঁদায়।
ঢাকার যানজট নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, যানজট আগে থেকে অনেকটা কমেছে এবং খুব শিগগিরই তা ঢাকা শহর থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। কারণ অনেক ফ্লাইওভারগুলোর কাজ হচ্ছে, এজন্য একটু সময় দরকার। এদিক থেকে কলকাতা এগিয়ে গেছে।
কলকাতার কোন জায়গা তাকে আকর্ষণ করে তা নিয়ে তিনি বলেন, ‘ইকো পার্ক ভালো লাগে, ওখানে গেলে নস্টালজিক হয়ে যাই। নিকো পার্কও ভালো লাগে, ছেলের জন্য ইতিমধ্যেই দুই বার সেখানে গিয়েছি। তখন আমিও বাচ্চা হয়ে যাই।’
কলকাতার ফুচকা প্রেমের প্রসঙ্গ টেনে অপু বলেন, ‘কলকাতার এই খাদ্যটার উপর আমার একটা ভালো লাগা কাজ করে।’
কলকাতার পূজোর প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘রাস্তা থেকে শুরু করে ঢাকের আওয়াজ, যেটাকে পরিপূর্ণ পুজো বলা হয়- কলকাতার পুজোয় সেই ফ্লেভারটা পাওয়া যায়।’
অপু বিশ্বাসের অভিমত তার ছবি, পোশাক নিয়ে যেভাবে মাঝেমধ্যে ট্রোল করা হয়, তাতে তার ভালোই লাগে। কারণ তবেই বোঝা যায় তিনি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন। ঘুরিয়ে এই ট্রোল করাকে সমর্থনে করেছেন অপু। কারণ ট্রোল হলে আরো মানুষের কাছাকাছি পৌঁছানো যায়।
শাকিব খানের সাথে অভিনয় করার সুযোগ আসলে তিনি করবেন কিনা এই প্রশ্নের উত্তরে অপু বলেন, ‘আমি একজন অভিনেত্রী। আমার কাজই অভিনয় করা। তাই গল্প বা চরিত্র পছন্দ হলে সেখানে না করার কোন প্রশ্নই ওঠে না।’ এসময় আগামী ভবিষ্যতে কলকাতায় শুটিং করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন তিনি।
শাকিব, বুলবুলি, অপুকে নিয়ে কোন ছবি হলে তাতে অভিনয় করতে চান কি না, সেই প্রশ্নের উত্তরে বলেন, পরিচালক বা প্রযোজকরা কি আদৌ তা চায়? তারা যদি মনে করেন যে চলচ্চিত্রের স্বার্থে এটা দরকার, তাদেরকে একসাথে নিয়ে অভিনয় ছবি করালে ভালো হবে সেক্ষেত্রে তারাই ডিসিশন মেকার।
যদি সিনেমায় না আসতেন, তবে নৃত্যশিল্পী হিসেবে কিংবা আইনজীবী হিসেবে তার পরবর্তী ক্যারিয়ার করতেন বলেও জানান অপু। কারণ ছোটবেলা থেকেই তিনি যুক্তি দিয়ে কথাও পছন্দ করতেন।
সাফ গেমসে চ্যাম্পিয়ন হওয়া বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকেও এদিন ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। বলেন, ‘ফুটবলে বাংলাদেশ নারী দল যেভাবে বীরত্ব দেখিয়েছে বা নারীরা যেভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে গর্ববোধ করেন তিনি।’
আরও পড়ুন: বিগ বস থেকে সাজিদকে সরাতে তথ্যমন্ত্রীকে চিঠি
সম্প্রতিকালে সাদা শাড়ি, মাথায় ও গালে সিঁদুর লাগানো ছবি ঘুরে বেড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে। তবে কি তিনি কলকাতায় বিয়ে করতে চলেছেন বা সংসার পাতবেন? এই প্রশ্নের জবাবে অপু বলেন, অপু বিশ্বাসের নামের সাথে যেহেতু অভিনেত্রী শব্দটা রয়েছে, তাই সেখানে স্বাধীনতা আছে। তাছাড়া ব্যক্তি জীবনটা এবার আর লুকিয়ে নয়, সবাইকেই জানিয়েই করবো।
সবশেষ রাজনীতিতে আসছে চান কিনা এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এখনই নয়। এই মুহূর্তে ছবিতে ফোকাস করছি।’
একাত্তর/আরএ