ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দিল্লির বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বুধবার। ক্ষমতাসীন দল আম আদমি পার্টি ও বিজেপির মধ্যে হবে মূল লড়াই। বিভিন্ন জনমত সমীক্ষার থেকে পূর্বাভাস পাওয়া গেছে, সব কটি আসনে লড়লেও রাহুল গান্ধী ও মল্লিকার্জুন খড়্গের কংগ্রেস ক্ষমতার দৌড়ে নেই।
৭০ আসনবিশিষ্ট বিধানসভার ভোট হবে এক দিনেই। শনিবার বোঝা যাবে, টানা চতুর্থবারের মতো দিল্লির দায়িত্বে আম আদমি পার্টি (আপ) আসবে, নাকি ২৭ বছর পর বিজেপি তাদের হারিয়ে দিল্লি দখল করবে।
মঙ্গলবার, মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার দিল্লি বিধানসভার ভোটের দিন ঘোষণা করে জানিয়েছেন, এক কোটি ৫৫ লাখেরও বেশি মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। তার মধ্যে দুই লাখের বেশি ভোটদাতা এই প্রথমবার ভোট দেয়ার অধিকার পাবেন।
কংগ্রেসের পাশাপাশি গেল ১০ বছর ধরে ক্ষমতাসীন আপও ৭০টি আসনে লড়ছে। বিজেপি প্রার্থী দিয়েছে ৬৮টি আসনে। একটি করে আসন ছেড়েছে এনডিএ’র দুই সহযোগী, জেডিইউ এবং এলজেপিকে।
এবারের ভোটে আপকে হারাতে কোমর কষে নেমেছে বিজেপি। আবগারি (মদ) মামলায় সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে নাস্তানাবুদ করতে তারা চেষ্টার ত্রুটি রাখেনি। দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের ঢেউয়ে ভেসে রাজনৈতিক দল গঠন করে দিল্লি দখল করা কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে দুর্নীতিকেই হাতিয়ার করেছে বিজেপি।
সেই মামলায় জেল খাটতে হয়েছে কেজরিওয়ালকে। তারই সঙ্গে জেলে গেছেন সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়া, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন ও সংসদ সদস্য সঞ্জয় সিং। প্রত্যেকেই এখন জামিনে মুক্ত।
দিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল অভিযোগ করেন, কমিশনের একাংশের মদতে হোম ভোটিংয়ের নামে কারচুপি করতে সক্রিয় হয়েছে বিজেপি। পাশাপাশি, এদিন বিজেপি বিভিন্ন ধরনের সংঘর্ষের ঘটনায় লিপ্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে আপ প্রধান।
আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল তিনবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। ২০১৩ সালে কংগ্রেসের সমর্থনে, তারপর ২০১৫ সালে তিনি বিপুলভাবে জেতেন। ৭০টির মধ্যে ৬৭টি আসন পায় আপ। কংগ্রেস একটিও আসন পায়নি। ২০২০ সালে কেজরিওয়াল আবার ৬২টি আসনে জিতে মুখ্যমন্ত্রী হন।
লোকসভা নির্বাচনে আপ একটাও আসনে জেতেনি। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করেও তারা জিততে পারেনি। দিল্লির সাতটি আসনই পেয়েছে বিজেপি। বিধানসভা নির্বাচনে কেজরিওয়াল আর কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করেননি। একাই লড়ছেন। আম আদমি পার্টি এবার জয়ের আশা ছাড়েনি।
সোমবার প্রচারণা শেষ হওয়ার পর কেজরিওয়াল কবুল করেছেন, লড়াই এবার ক্ষুরধার। বলেছেন, আসনসংখ্যা কমলেও তারাই জিতবেন। তবে প্রশ্ন উঠেছে, লোকসভায় খারাপ ফলের ধাক্কা কাটিয়ে আপ কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে? কেজরিওয়াল কি আবার দলকে জেতাতে পারবেন?
ইতিহাস বলছে, দিল্লির ভোটে কেজরিওয়ালের একের পর এক সাফল্যের পিছনে আছে, জনমোহিনী সিদ্ধান্ত। তিনি প্রথমে স্লোগান দেন, 'বিজলি হাফ, পানি মাফ', অর্থাৎ, বিদ্যুতের মাসুল অর্ধেক করা হবে ও পানির মাসুল কার্যত দিতে হবে না, বিশেষ করে গরিবদের। পরে ক্ষমতায় এসে তিনি প্রতিশ্রুতি পালন করেন।
এরপর তিনি মেয়েদের সরকারি বাসে যাতায়াত ফ্রি করে দেন। বিভিন্ন জায়গায় মহল্লা ক্লিনিক করে বিনা পয়সায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। সরকারি স্কুলের হাল ফেরাবার ব্যবস্থা করা হয়। এবার কেজরিওয়ালের হাতিয়ার এমনই একটি ঘোষণা, আপ ক্ষমতায় এলে মেয়েদের মাসে দুই হাজার একশ টাকা করে দেয়া হবে।
বিজেপি এখনো পর্যন্ত দিল্লির জন্য কোনো মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। তারা প্রধানমন্ত্রী মোদীর নামেই ভোট চাইবে। প্রধানমন্ত্রী দিল্লির জন্য বেশ কয়েকটি প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছেন। বিজেপি চাইছে, লোকসভা ভোটের সাফল্যকে ধরে রাখতে। তবে লোকসভা ভোট ছিল মোদী বনাম রাহুল গান্ধীর লড়াই। সেখানে কেজরিওয়ালের ভূমিকা ছিল খুবই কম। কিন্তু এবার কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে বিজেপিকে লড়তে হবে।
দিল্লিকে দীর্ঘদিন ধরে শাসন করলেও গত দুইটি বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস একটিও আসনে জিততে পারেনি। কংগ্রেস দিল্লিতে সরকার বানাবে তা দলের অতি বড় সমর্থকও মনে করেন না। তবে তারা দাবি করছেন, দল এবার কয়েকটি আসনে জিতবে। তাদের ভোটের হার বাড়বে। এমনকি যদি কোনো দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায় এবং কংগ্রেস কয়েকটি আসনে জিততে পারে, তা হলে তাদের গুরুত্ব অনেকটাই বাড়বে।