গাজায় নতুন করে স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরাইলি বাহিনী। দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, একটি গুরুত্বপূর্ণ করিডোরের অংশ পুনরুদ্ধারের জন্য এই সীমিত স্থল অভিযান শুরু করেছে তারা। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী বলেছে, তাদের অভিযানে নেটজারিম করিডোরে ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণ বেড়েছে।
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস বলেছে, স্থল অভিযান ও নেটজারিম করিডোরে অনুপ্রবেশ দুই মাস ধরে চলা যুদ্ধবিরতি চুক্তির 'নতুন ও বড় লঙ্ঘন'। এক বিবৃতিতে হামাস চুক্তির প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে ও মধ্যস্থতাকারীদের 'তাদের দায়িত্ব পালনের' আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে গেলো, ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলের বিরতিহীন বিমান হামলায় আরো ৭১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেখানে মঙ্গলবার থেকে চলা হামলায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৪৩৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ১৮৩ জনই শিশু।
বিমান হামলায় শতশত ফিলিস্তিনির প্রাণহানির রেশ না কাটতেই গাজা উপত্যকায়, এবার নতুন করে স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী- আইডিএফ। ইসরাইলের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা গাজার একটি গুরুত্বপূর্ণ করিডোরের অংশ পুনরুদ্ধারের জন্য সীমিত স্থল অভিযান শুরু করেছে।
আইডিএফ বলেছে, তাদের সেনারা গাজার উত্তর ও দক্ষিণকে বিভক্তকারী নেটজারিম করিডোর পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে। তারা গাজার উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে আংশিক বাফার এলাকা তৈরির জন্য স্থল তৎপরতা শুরু করেছে।
সংবাদ মাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, আইডিএফ ওই অঞ্চলের স্থল সীমান্তের তিন পাশে বিশাল এলাকা খালি করার আদেশ জারি করেছে, যা শিগগিরই বড় ধরনের স্থল অভিযান শুরুর ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এই সব আদেশের কারণে ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোর মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর চিহ্নিত এলাকা থেকে সরে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে দেখা গেছে পরিবারগুলোকে।
গাজায় নতুন করে বিমান হামলা তৃতীয় দিনের মতো অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। গাজার উত্তর ও দক্ষিণে ইসরা্বিলি গোলাবর্ষণে অনেক হতাহত হয়েছে। এর মাঝে খান ইউনিসে কমপক্ষে ২০ জন নিহত হয়েছে।
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সতর্ক করে বলেছেন, গাজা উপত্যকায় হামাসের বিরুদ্ধে তীব্র যুদ্ধের পাশাপাশি অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরাইল শক্তিশালী হামলা চালাতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে তীব্র যুদ্ধ চালাচ্ছি, গত ২৪ ঘণ্টায় হামাস আমাদের বাহিনীর সক্ষমতা বুঝতে পেরেছে এবং এটা কেবল শুরু। আমরা যুদ্ধের সব লক্ষ্য অর্জনের জন্য লড়াই চালিয়ে যাব।
অন্যদিকে এক ভিডিও বার্তায় ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে শেষ সতর্কতা’ জারি করে সেখানে আটক অবশিষ্ট জিম্মিদের ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, হামাসের বিরুদ্ধে বিমান হামলা ছিল প্রথম পদক্ষেপ, যা আসছে তা আরও কঠিন। আপনাদেরকেও এর মূল্য দিতে হবে। ইসরায়েল এমন শক্তি প্রয়োগ করবে যা আপনি আগে কখনও দেখেননি।
জাতিসংঘে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের মিশন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে গাজায় ইসরাইলের নতুন আক্রমণ বন্ধ করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
এমন অবস্থায় গাজায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনে ইসরাইলকেই অভিযুক্ত করেছে ইসরাইলি সংবাদপত্র হারেৎজ। বলেছে, হামাস নয়, গাজায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে ইসরাইল। হারেৎজ তার একটি সম্পাদকীয়তে বলেছে, চুক্তি বাস্তবায়ন এবং জিম্মিদের ফিরে আসার পথে হামাস নয় বাধা দিচ্ছে ইসরায়েল।