ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ভয়াবহ দাবানলে আলজেরিয়া, ইতালি এবং গ্রীসে ৪০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছে। এই দাবানলের ফলে গ্রাম এবং রিসোর্টগুলো হুমকির মুখে থাকায়, হাজার হাজার লোককে ওইসব এলাকা থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
বুধবার বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, কর্ফু এবং ইভিয়াতেও আগুন ছড়িয়ে পড়ায় পুরো রোডস দ্বীপে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
দাবানলের কারণে দীর্ঘ তাপপ্রবাহে এসব জায়গার অবস্থা গুরুতর। গ্রিসের কিছু অংশে তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে চলে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সিসিলি এবং পুগলিয়ায় আগুনের কারণে হাজার হাজার মানুষ তাদের বাড়িঘর রেখে পালিয়ে গেছেন।
প্রবল বাতাস এবং শুষ্ক গাছপালার মধ্যে আগুন লাগায় অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা অনেক এলাকায় আগুন নেভাতে লড়াই করছেন।
স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মৃতের সংখ্যা আলজেরিয়ায়। সেখানে আলজিয়ার্সের পূর্ব উপকূলীয় প্রদেশ বেজায়ায় স্থানান্তরের সময় ১০ সৈন্যসহ ৩৪ জন আগুনে পুড়ে মারা যান। নিহতদের মধ্যে ২৩ জনই বেজায়ার।
আলজেরিয়ান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রোববার থেকে ৪০ শতাংশ দাবানল নিভিয়ে ফেলা হয়েছে। তবে অগ্নিনির্বাপন প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এই কাজে প্রায় ৪০০০ দমকল কর্মী, কয়েকশ ফায়ার ইঞ্জিন এবং কয়েকটি বিমান এখনও কাজ করে যাচ্ছে।
আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত আদিল এল সেলমি বলেন, আগুন রেস্তোরাঁর কাছাকাছি আসতেই তারা বেরিয়ে আসেন। আলজেরিয়ার শহর তাবারকা এবং মেলোলার মাঝখানে তার একটি রেস্তোরাঁ আছে।
সেলমি আরও বলেন, ভয়াবহ তাপপ্রবাহের সময় গত সপ্তাহে তাবারকাতে পানির অভাব দেখা দেয়, যা অবস্থাকে আরও কঠিন করে তোলে। সেসময় রেস্তোরাঁর কাঠের ভবনটি ধ্বংস হওয়ার কয়েকঘণ্টা পরেও আগুন নেভানো যায়নি।
প্রতিবেশী তিউনিসিয়াতেও আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে উপকূলীয় গ্রাম মেলৌলা থেকে ৩০০ জনকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
গ্রীসে, নাগরিক সুরক্ষা মন্ত্রণালয় বুধবার দেশের ১৩টি অঞ্চলের মধ্যে ছয়টিতে আগুনের ‘চরম বিপদ’ সম্পর্কে সতর্ক করেছে।
জলবায়ু বিজ্ঞানীদের একটি দল ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশন গ্রুপ বলেছেন, এই ভয়াবহ জলবায়ু পরিবর্তন হয়েছে মানুষের কারণে। যার ফলস্বরুপ এই মাসে দক্ষিণ ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা এবং চীনে তীব্র তাপপ্রবাহর সৃষ্টি হয়েছে।
এথেন্সের ঠিক উত্তরে ইভিয়া দ্বীপে একটি উপত্যকায় কানাডার একটি অগ্নিনির্বাপক বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ফলে দুই পাইলট নিহত হন। দ্বীপের একটি প্রত্যন্ত গ্রামের একটি খুপরিতে একজন ব্যক্তির পোড়া দেহ পাওয়া গেছে।
রোডস দ্বীপের দক্ষিণে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ২০ হাজারেরও বেশি লোককে বাড়িঘর এবং রিসোর্ট থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
বিমানবন্দরের একজন কর্মকর্তা বার্তাসংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, রোববার থেকে মঙ্গলবারের মধ্যে ৪০টিরও বেশি জরুরি ফ্লাইটে পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ বাড়ি ফিরেছে।
আরও পড়ুন: ডাচ উপকূলে ৩০০ গাড়িসহ জাহাজে আগুন, নিহত এক
এদিকে, বুধবার ভোরে ফরাসি ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপ কর্সিকাতেও আগুন লেগেছে। সেখানে ১৩০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের তাণ্ডবে আগুন জ্বলে ওঠে এবং কয়েকঘণ্টা ধরে তিনটি গ্রাম আগুনে পুড়তে থাকে।
একাত্তর/পিএজে