গরুর দাম শুনে চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার অবস্থা। কিন্তু বাস্তবেই এটা ঘটেছে লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে। সেখানে একটি গাভী গরুই বিক্রি হয়েছে চার মিলিয়ন ডলারে, যা টাকার অঙ্কে ৪৭ কোটি।
নিলামে বিক্রি হওয়ার পরই বিশ্ব রেকর্ড নাম লিখিয়ে ফেলেছে ভিয়াতিনা-১৯ এফআইভি মারা মুভিস নামের গরুটি। কারণ, এর আগে কখনোই পৃথিবীর কোথাও আর এতো দামে একটি গরু বিক্রি হয়নি।
এমনকি এর আগে সর্বোচ্চ দামে যে গরুটি বিক্রি হয়েছিল, তার দাম ছিলো ভিয়াতিনার তিন ভাগের একভাগ। তাই গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে এখন ভিয়াতিনাই সবচেয়ে বেশি বেশি দামে বিক্রি হওয়া গরু বলে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম ইন্ডিপেনডেন্ট।
তুষার সাদা রঙের দানবীয় আকৃতির ভিয়াতিনার ওজন এক হাজার ১০০ কেজি। নিজস্ব জাতের অন্যান্য গরুগুলোর তুলনায় তার দেহাকৃতি দ্বিগুণ।
বিশ্বের অন্যতম প্রধান গোচারণ ভূমি ব্রাজিল। দেশটিতে রয়েছে প্রায় ২৩ কোটি গরু। কিন্তু এত কিছুর মধ্যে ভিয়াতিনা-১৯ এফআইভি মারা মুভিস সবদিক থেকেই ভিন্ন ও অসাধারণ। তার রয়েছে যেমন বিশাল দেহ, তেমনি নিরাপত্তায় রয়েছে সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামেরা। সশস্ত্র প্রহরীরা পাহারা দেয় তাকে।
তাই আশ্চর্যজনক এই গাভীটিকে একবার হলেও দেখার জন্য তার মালিকরা ব্রাজিলের প্রাণকেন্দ্রের একটি মহাসড়কের পাশে একাধিক বিলবোর্ড বসিয়েছে। সেখানে অতি উন্নত জাতের এই গরুটির নানা মহিমার প্রশংসা করে খামারে গিয়ে দর্শন করে আসার আমন্ত্রণও জানানো হয়েছে।
বিশ্বে গরুর মাংস রপ্তানির শীর্ষে রয়েছে ব্রাজিল। গবাদি পশু শিল্প বিশ্বের উদীয়মান শক্তিধর দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম প্রধান উৎস। তাই ব্রাজিলের সরকারও গরুর মাংসের নতুন নতুন রপ্তানি বাজার ধরার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
কিন্তু পরিবেশ বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, গরুর মাংসে স্বাস্থ ঝুঁকি থাকায়, মানুষের তা স্বল্প পরিমাণে খাওয়া উচিত। আর ব্রাজিলের বিশাল বিশাল গরুর খামারের কারণে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বন আমাজনের উজাড় হচ্ছে। সেখানে অবাধে চড়ানো হচ্ছে গৃহপালিত এই প্রাণীটি। এতে উজাড় হচ্ছে জঙ্গল। আর গ্রিনহাউস গ্যাসও বাড়াচ্ছে।
মাংস উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষে থাকার জন্য ব্রাজিলের উচ্চাকাঙ্ক্ষার ফসল হলো ভিয়াতিনা-১৯। এই ধরনের মাংসবহুল জাত তৈরির জন্য বছরের পর বছর কাজ করছে দেশটি। আর তারই সফল বাস্তবায়ন হচ্ছে ভিয়াতিনা-১৯।
এই জাতের গরুগুলি খুব দ্রুত বড় হয়। তবে এখনই এই জাতের গরুগুলিকে মাংসের বদলে দ্রুত বংশ বিস্তারে মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। ফলে খামারিরাও এই গরুগুলোর ডিম্বাণু ও শুক্রাণু সংগ্রহ করে ভ্রূণ তৈরি করে, তা অন্য গরুর গর্ভে দিয়ে উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছে। বলে রাখা ভালো, ভিয়াতিনা-১৯-এর ডিম্ব কোষ সংগ্রহের জন্য কেউ কেউ আড়াই লাখ ডলার বা প্রায় তিন কোটি টাকা পর্যন্ত খরচ করছেন।
এই জাতের গরুকে পুরস্কার বিজয়ীদের উচ্চ নিলামে বিক্রি করা হয়। অনেকের একার পক্ষে এটা কেনা সম্ভব হয় না। তাই রেঞ্চাররা মালিকানা ভাগ করে নেয়। এরপর তারা ভ্রূণ তৈরি করে এবং সারোগেট গাভীর গর্ভে দেয়।
ভিযাতিনা-১৯ এর মালিকদের একজন নে পেরেইরা। হেলিকপ্টারে মিনাস গেরাইস রাজ্যে নিজের খামারে আসার পর কথা বলেন ইন্ডিপেনডেন্টের প্রতিবেদকের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা অভিজাত এই গবাদি পশু এখন জবাই করছি না। আমরা তাদের প্রজনন কাজে ব্যবহার করছি এবং বংশ বিস্তার করছি।
নে পেরেইরা বলেন, আমরা চাচ্ছি, পরবর্তীতে যেন সারা বিশ্বের মানুষই এই জাতের গরুর মাংস খেতে পারেন। আমি মনে করি ভিয়াতিনা এটা পারবে।
পেরেইরার মেয়ে লরানি মার্টিন্স হলেন একজন গবাদিপশু চিকিৎসক। খামারের দেখভাল বিশেষ করেন ভিয়াতিনাকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখেন তিনিই। আর এই জাত নিয়ে তিনি খুবই উচ্ছ্বসিত।
মার্টিন্স বলেন, গরুর দামে চক্ষু চড়কগাছ হওয়া থেকে এটাই বোঝা যাচ্ছে যে, সে কত গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। তার রয়েছে দ্রুত বেড়ে ওঠার ক্ষমতা, উন্নতমানের গর্ভধারণ এবং ব্যাপকভাবে নিজস্ব বৈশিষ্ঠসম্পন্ন বংশ বিস্তারের দক্ষতা। আর প্রজননের গুরুত্ব দেয়া হয়- অঙ্গবিন্যাস, খুরের দৃঢ়তা, দেহের নমনীয়তা, মাতৃত্বের ক্ষমতা এবং সর্বোপরি সৌন্দর্য- যার সবকিছু ভিয়াতিনার মধ্যে রয়েছে।
প্রায় ২৩ কোটি গরুর দেশ ব্রাজিলের ৮০ শতাংশ গাভীই জেবুস জাতের। এটি ভারতে বংশোদ্ভূত উদ্ভূত একটি উপজাত। এদের রয়েছে স্বতন্ত্র কুঁজ এবং ঘাড়ের চামড়ায় ভাঁজসহ গলকম্বল। কিন্তু ভিয়াতিনা-১৯ নেলোর প্রজাতির থেকে উদ্ভূত। এটি দুধ নয়, মূলত মাংস উৎপাদনের জন্য বাছাই করা হয়েছে।