এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যা মামলার আসামি শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা তিনটি মোবাইল ফোন পুকুরে ফেলে দেন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবু।
সেই মোবাইল ফোনগুলো উদ্ধারে দুই একদিনের মধ্যে ঝিনাইদহ যাচ্ছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের তদন্ত দল। উদ্ধার অভিযানে একজন ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত থাকবেন। সঙ্গে থাকবেন গ্যাস বাবুও।
মঙ্গলবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা জানান মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেছেন, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা কাজী কামাল আহমেদ ওরফে গ্যাস বাবু আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে মোবাইলগুলো কোথায় কোথায় ফেলেছেন সেগুলো তিনি বলেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় আদালতের কাছে আবেদন করা হয় বাবুকে সঙ্গে নিয়ে আলামত উদ্ধারের চেষ্টার বিষয়ে।
হারুন অর রশীদ জানান, গ্যাস বাবু আদালতে বলেছেন, তিনি একজন নেতার নির্দেশে আশেপাশের কোনও এক নালা বা পুকুরে মোবাইলগুলো ফেলে দিয়েছেন। কোন নালা বা পুকুরে ফেলেছেন সেটি তিনি আদালতকে জানিয়েছেন।
ডিবিপ্রধান বলেন, গ্যাস বাবুকে সঙ্গে নিয়ে একজন ম্যাজিস্ট্রেটসহ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নিয়ে আলামত উদ্ধারে জোর চেষ্টা চালানো হবে। পানির মধ্যে থেকে আলামত উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি ও জেলেদের কাজে লাগানো হবে।
গ্রেপ্তার কামাল আহমেদ বাবুকে ফের রিমান্ডে নিতে আবেদন করে ডিবি। সোমবার আতালত রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তাকে ঝিনাইদাহ কারাগারে পাঠানোর জন্য কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেখান থেকে এক জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসহ বাবুকে নিয়ে তার ব্যবহৃত তিনটি মোবাইল ফোন উদ্ধারে অভিযানের নির্দেশ দেন আদালত।
আলামতগুলো যাতে কেউ সরিয়ে ফেলতে না পারে সে জন্য ডিবি কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে কি না জানতে চাইলে হারুন বলেন, এ বিষয়ে স্থানীয় পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে। অবশ্যই সেটা নজরদারিতে থাকবে।
তিনি আরও বলেন, যখন কাজী কামাল আহমেদ ওরফে গ্যাস বাবুকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, তখন তিনি বলেছিলেন মোবাইলগুলো হারিয়ে গেছে, তিনি জিডি করেছেন। কিন্তু আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে তিনি জানিয়েছেন, একজন নেতার নির্দেশে পুকুরে ফেলে দিয়েছেন। এই মোবাইলগুলো দিয়েই আনার হত্যার মূল ঘাতক আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া গ্যাস বাবুর সঙ্গে অসংখ্যবার কথা বলেছেন। এছাড়া অসংখ্য মেসেজ তারা আদান-প্রদান করেছেন। মোবাইলগুলোতে ডিজিটাল তথ্য-উপাত্ত আছে বলে মনে করছি। না হলে গ্যাস বাবু মোবাইলগুলো পানিতে ফেলে দেবেন কেন? মোবাইলগুলো পেলে মামলার তদন্তে অনেক সহায়ক হবে। সেজন্য মোবাইল উদ্ধার করা জরুরি।
এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন কবে নাগাদ কলকাতায় যাবেন- এই প্রশ্নের জবাবে ডিবিপ্রধান বলেন, কলকাতা পুলিশের সঙ্গে এমপি আনারের পরিবারের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। ডরিন কিছুটা অসুস্থ, এজন্য হয়তো দেরি হচ্ছে। তারা শিগগিরই কলকাতায় যাবেন ডিএনএ নমুনা দেওয়ার জন্য।
তিনি বলেন, মামলা যেহেতু এখনও চলমান। এই মুহূর্তে কে দোষী আর কে নির্দোষ তা বলতে পারছি না। কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে হয়রানি করা হবে না। আর কোনো দোষী ব্যক্তিকে ছাড় দেওয়া হবে না।
গত ১২ মে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে কলকাতায় যাওয়ার পরেরদিন রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যান তিনবারের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার।
এরপর ২২ মে সকালের দিকে তার খুনের খবর প্রকাশ্যে আসে। পুলিশ বলছে, কলকাতার উপকণ্ঠে নিউটাউনের অভিজাত আবাসন সঞ্জীবা গার্ডেনসের একটি ফ্ল্যাটে আনারকে খুন করা হয়।
খুনের আলামত মুছে ফেলতে দেহ কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়। এরপর সুটকেস ও পলিথিনে ভরে ফেলে দেয়া হয় বিভিন্ন জায়গায়। তবে এই সংসদ সদস্যের মরদেহ বা দেহাংশ এখনও মেলেনি।
এই ঘটনায় আরেক অভিযুক্ত ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিন্টুকেও হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ডিবি।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কামাল আহমেদ আসামি শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি জানান, ১৬ মে রাত সাড়ে ১০টার দিকে শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে কামাল আহমেদ এমপি আনার অপহরণ সংক্রান্ত বিষয়ে হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলেন। পরদিন ১৭ মে শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে কাজী কামাল আহমেদ বাবু অত্যন্ত পরিকল্পিত উপায়ে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানাধীন ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের পাশে গাড়ির ভেতর সাক্ষাৎ করে ভিকটিমকে অপহরণ ও পরবর্তীতে হত্যা সংক্রান্ত ছবি, টাকা-পয়সা লেনদেনের বিষয়ে গোপন মিটিং করে।
গত ১২ মে সন্ধ্যায় আনোয়ারুল আজিমের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা দায়ের করেন।
এই মামলায় শিমুল ভূইঁয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভূইঁয়া ওরফে আমানুল্যাহ সাঈদ, তানভীর ভূইঁয়া ও শিলাস্তি রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। রিমান্ড শেষে তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছেন। এছাড়া গ্রেপ্তার ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু রিমান্ড শেষে কারাগারে রয়েছেন।
হারুন অর রশীদ আরও বলেন, আক্তারুজ্জামান শাহীন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বন্দি বিনিময় চুক্তি আছে। ভারতের কাছে শাহীন মোস্ট ওয়ান্টেড। শাহীনকে ফিরিয়ে আনার জন্য ভারত চেষ্টা করবে।