সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে খুনের উদ্দেশ্যে অপহরণের মামলায় গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেতা কাজী কামাল আহমেদ বাবুর ওরফে গ্যাস বাবুকে রিমান্ডের আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
সোমবার শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহর আদালত এই আদেশ দেন।
একইসঙ্গে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তাকে ঝিনাইদাহ কারাগারে পাঠানোর জন্য কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেখান থেকে এক জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসহ বাবুকে নিয়ে তার ব্যবহৃত তিনটি মোবাইল ফোন উদ্ধারে অভিযানের নির্দেশ দেন আদালত।
বাবুর পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহফুজুর রহমান । রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন।
বাবুর পক্ষে এ এস এম আবুল কাশেম খান রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে মোবাইল ফোন উদ্ধারের অভিযানের নির্দেশ দেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী এ এস এম আবুল কাশেম খান এ সব তথ্য জানান।
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্যাস বাবুকে আবারও হেফাজতে নিতে রোববার আদালতে আবেদন করে ডিবি। এর আগে গত ৯ জুন তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছিলো। এরপর ১৪ জুন আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বাবু। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
গত ৬ জুন রাতে ঝিনাইদহ শহরের আদর্শপাড়া এলাকা থেকে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহম্মেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুকে আটক করে ডিএমপির ডিবি পুলিশের একটি দল।
স্থানীয়দের দাবি, বাবু এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার অন্যতম হোতা শিমুল ভূঁইয়ার নিকটাত্মীয়।
তদন্তসংশ্লিষ্ট ও আদালত সূত্রে জানা যায়, কাজী কামাল ওরফে গ্যাস বাবু স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছেন, এমপি আজিমকে হত্যার পরিকল্পনার সময় ও হত্যার পর মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীনের সঙ্গে তার একাধিকবার বৈঠক হয়।
বৈঠকে হত্যার জন্য করা চুক্তির টাকার একটি অংশ ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর কাছ থেকে নিয়ে হত্যা পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়াকে দেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয় তাকে। এ জন্য এমপি খুনের পর আমানুল্লাহর সঙ্গে তার (কামাল) একাধিকবার মোবাইলে কথা হয় এবং সাক্ষাৎ হয়। কিন্তু টাকা নিয়ে দেয়ার আগেই গ্রেপ্তার হন আমানুল্লাহ।
তদন্তসংশ্লিষ্ট ডিবি কর্মকর্তাদের তথ্যে জানা গেছে, এমপি আজিমকে হত্যার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক আক্তারুজ্জামান শাহীন পাঁচ কোটি টাকায় খুনি ভাড়া করেছিলেন।
গত ১২ মে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে কলকাতায় যাওয়ার পরেরদিন রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যান তিনবারের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার।
এরপর ২২ মে সকালের দিকে তার খুনের খবর প্রকাশ্যে আসে। পুলিশ বলছে, কলকাতার উপকণ্ঠে নিউটাউনের অভিজাত আবাসন সঞ্জীবা গার্ডেনসের একটি ফ্ল্যাটে আনারকে খুন করা হয়।
খুনের আলামত মুছে ফেলতে দেহ কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়। এরপর সুটকেস ও পলিথিনে ভরে ফেলে দেয়া হয় বিভিন্ন জায়গায়।
এই ঘটনায় আরেক অভিযুক্ত ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিন্টুকেও হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ডিবি।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কামাল আহমেদ আসামি শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি জানান, ১৬ মে রাত সাড়ে ১০টার দিকে শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে কামাল আহমেদ এমপি আনার অপহরণ সংক্রান্ত বিষয়ে হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলেন। পরদিন ১৭ মে শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে কাজী কামাল আহমেদ বাবু অত্যন্ত পরিকল্পিত উপায়ে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানাধীন ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের পাশে গাড়ির ভেতর সাক্ষাৎ করে ভিকটিমকে অপহরণ ও পরবর্তীতে হত্যা সংক্রান্ত ছবি, টাকা-পয়সা লেনদেনের বিষয়ে গোপন মিটিং করে।
গত ১২ মে সন্ধ্যায় আনোয়ারুল আজিমের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস শেরেবাংলা নগর থানায় এই মামলাটি দায়ের করেন।
এই মামলায় শিমুল ভূইঁয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভূইঁয়া ওরফে আমানুল্যাহ সাঈদ, তানভীর ভূইঁয়া ও শিলাস্তি রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। রিমান্ড শেষে তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছেন। এছাড়া গ্রেপ্তার ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিন্টু রিমান্ড শেষে কারাগারে রয়েছেন।