কলকাতায় বাংলাদেশের কিছু অপরাধীর হাতে নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। আর, এই হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা হিসাবে উঠে এসেছে এমপি আনারের ছোট বেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক অংশীদার আক্তারুজ্জামান শাহিনের নাম। তাকে হন্য হয়ে খুঁজছেন গোয়েন্দারা।
চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডে নাম আসার পরই সবার প্রশ্ন এই শাহিন। তিনি ঝিনাইদহের বাসিন্দা ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। তার বড় ভাই ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌর মেয়র। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের সূত্র ধরে এমপি আনারকে হত্যার পরিকল্পনা করে আক্তারুজ্জামান শাহিন।
ঝিনাইদহের কোটচাদপুর উপজেলার আছাদুজ্জামান কাটু মিয়ার তিন সন্তান ও দুই মেয়ের মধ্যে বড় ছেলে শহিদুজ্জামান সেলিম পৌর আওয়ামী লীগ নেতা ও মেয়র, মেজো ছেলে আমেরিকা প্রবাসী মনিরুজ্জামান ও ছোট ছেলে আক্তারুজ্জামান শাহীন শাহিনে। তার স্ত্রী ও দুই ছেলে-মেয়ে আমেরিকাতে বসবাস করেন।
যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্কে শাহিনের একটি বাড়ি রয়েছে। সেই বাড়ির ঠিকানা ৩৭৯ ইস্ট সেভেন্থ স্ট্রিট ব্রুকলিন এলাকায় বলে জানা গেছে। জানা গেছে বছরের ছয় মাস নিউইয়র্কে, আর ছয় মাস বাংলাদেশে ভাগাভাগি করে থাকেন শাহিন। তিনি একজন স্বর্ণ চোরাচালানকারী বলে অভিযোগ রয়েছে।
এলাকায় জনশ্রুতি আছে, আক্তারুজ্জামান শাহিন দেশের তেল, চাল, ডাল ব্যবসার আড়ালে মাদক ও স্বর্ণ পাচার করে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্ত দিয়ে। তার নিজ গ্রাম এলাঙ্গী ও পশ্চিমবঙ্গে বসেই দীর্ঘ ২০ বছর ধরে চরমপন্থি দলের নিয়ন্ত্রণ, মাদক ও স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন শাহিন।
ঝিনাইদহ ৩০ বিঘা জমির উপরে বাগান বাড়ি ও রিসোর্ট তৈরি করেছেন শাহিন। এ রিসোর্টে রাজনীতিবিদ, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সংসদ সদস্য, সিনেমা নায়িকাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ যাতায়াত করে থাকেন। এই বাগান বাড়ির ভেতরে জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ।
দু’মাস পরপর এই বাগান বাড়িতে নাচ গানের জলসা হতো খবর রয়েছে। শাহিনের বাগান বাড়িতে সংসদ সদস্য আনার শাহিনের একজন ব্যবসায়িক অংশীদার হিসাবে এসেছেন। দীর্ঘদিনের বন্ধু হওয়ার কারণে শাহিনের ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে যান, যাকে ঘিরে দ্বন্দ্ব তৈরি হলে খুনের পরিকল্পনা করেন শাহিন।
কোটচাদপুরের মানুষ তার অপকর্মের বিষয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছে। শাহিন চোরাকারবারি, স্বর্ণসহ নানা অপরাধ করলেও অনেক উপরে হাত থাকার কারণে তার নির্যাতন সহ্য করেছে। গত দেড় বছর আগে কোটচাদপুরে দুটি হত্যাকাণ্ডের সাথে এই শাহিন জড়িত বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন।
এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের অভিযুক্ত মূলহোতা শাহিনের বড় ভাই, পৌর মেয়র শহিদুজ্জামান সেলিম জানান, এমপি হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে পু্লিশ তদন্ত করছে। যদি ভাই জড়িত থাকে তবে তার শাস্তি দাবি করেন। সেই সাথে ১০ দিন আগে তার সাথে কথা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর থানার ওসি সৈয়দ আল মামুন জানিয়েছেন, তিনি নিজেও শাহিনের বাগান বাড়িতে গেছেন, সেখানে সুইমিংপুল থেকে শুরু করে মাছের পুকুর, খেলার মাঠ, চা বাগান, ডুপ্লেক্স বাড়ি এবং বিদেশি কুকুর রয়েছে। সেখানে উঁচুতলার লোকরা আসা-যাওয়া করতো বলে শুনেছে তিনি।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, খুনের পরিকল্পনা সাজিয়ে ১০ মে ঢাকায় চলে আসে শাহিন। এমপি আনোয়ারুল আজিম নিখোঁজের বিষয়টি দেশে আলোচিত হলে সে ১৮ মে আবারও ভারত হয়ে নেপালে চলে যায়। ২১ মে নেপাল থেকে চলে যায় দুবাই। ২২ মে দুবাই থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমায়।