বাগেরহাটে ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডব ও জলোচ্ছ্বাসে জেলার বিভিন্ন এলাকায় নদী পাড়ের বাঁধ ভেঙে গেছে।
রোববার রাতে জোয়ারে বাঁধ ভেঙে এবং উপচে জোয়ারের পানি বিভিন্ন গ্রামে ঢুকে পড়ে। জেলা সদরের দড়াটানা নদীর বেমরতা এলাকায় ছয় মিটার, মোড়েলগঞ্জে পানগুছি নদীর শ্রেণীখালী এলাকায় ১০ মিটার ও দেবরাজ কুমারীজোলা এলাকায় ৪০০ মিটার বেড়িবাঁধ পানির তোড়ে ভেঙে যায়। এছাড়া শরণখোলায় একটি রিংবাঁধ ভেঙে গেছে। বাঁধ ভেঙে এবং বৃষ্টির পানিতে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ৩০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
ঝড়ের তাণ্ডবে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ৪৫ হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে ১০ হাজার সম্পূর্ণ এবং ৩৫ হাজার ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতি হয়েছে।
কয়েক হাজার গাছপালা ভেঙেছে ও উপড়ে পড়েছে। জেলায় বিদ্যুতের খুটি ভেঙে এবং গাছ পড়ে তার ছিঁড়ে প্রায় পাঁচ লাখ গ্রাহক রোববার রাত থেকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছেন।
বাগেরহাট সদর, রামপাল, মোংলা, মোড়েলগঞ্জ এবং শরণখোলা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৩০ হাজার মমাছের পানিতে ডুবে গেছে। ভেসে গেছে চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। মৎস বিভাগের হিসাবে মাছ ভেসে এবং ঘেরের অবকাঠামোগতসহ প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে জেলার উপর দিয়ে এখনো ঝড়েবাতাস বয়ে যাচ্ছে এবং সেই সাথে বৃষ্টি ঝরছে। জলোচ্ছ্বাস এবং বৃষ্টিতে বাগেরহাটের নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক খালিদ হোসেন জানান, প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী জেলায় ১০ হাজার কাঁচাঘরবাড়ি সম্পূর্ণ এবং ৩৫ হাজার ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতি হয়েছে। কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জেলার ৭৫টি ইউনিয়নের পাঁচ লাখ মানুষ ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে আক্রান্ত হয়েছে।
আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা দুর্গত মানুষকে খাবারসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। জেলার বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে ৭০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
বাগেরহাট পল্লীবিদ্যুতের জেনারেল ম্যানেজার সুশান্ত রায় জানান, বিভিন্ন এলাকায় বেশকিছু বিদ্যুতের খুটি ভেঙে পড়েছে। গাছ পড়ে অসংখ্য স্থানে বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে গেছে। জেলায় তাদের চার লাখ ৮৫ হাজার গ্রাহক রোববার সন্ধ্যা থেকে বিদ্যুৎ বিছিন্ন রয়েছেন। বাগেরহাট শহরের ২০ হাজার গ্রাহকের মধ্যে এখনও অধিকাংশ এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে বলে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়াউল হক জানান।
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান মোহাম্মদ আল-বিরুনী জানান, বাগেরহাট সদর ও মোড়েলগঞ্জ এলাকায় নদী পাড়ে তিনটি স্থানে তাদের বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে এবং বিভিন্ন এলাকায় বাঁধ উপচে জোয়ারের পানিতে গ্রাম প্লাবিত করে। এছাড়া শরণখোলায় রিংবাঁধ ভেঙে গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে।