মারাত্মক এক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর পর ইরানের পরবর্তী কান্ডারির নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ মোখবার হচ্ছেন ইসলামি প্রজাতন্ত্রটির নতুন প্রেসিডেন্ট। পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে মোখবারের নাম ঘোষণা করেন ইরানের গার্ডিয়ান কাউন্সিলের মুখপাত্র।
ইরানের বার্তা সংস্থা ইরনার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির সংবিধান অনুযায়ী ভাইস প্রেসিডেন্টকেই অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করবেন বলে অনুমোদন দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলি খামেনি। পরবর্তী ৫০ দিনের মধ্যে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বোট হবে।
ইরানের সংবিধান বলছে, ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট মারা গেলে বা কোনো কারণে দায়িত্ব পালনে সক্ষম না হলে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেবেন ভাইস প্রেসিডেন্ট। পরবর্তী দু’মাসের মধ্যে নতুন নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে এবং নতুন প্রেসিডেন্ট বেছে নিতে হবে। এর আগে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব সামলাবেন ভাইস প্রেসিডেন্ট।
২০২১ সালের আগস্টে ইরানের প্রেসিডেন্ট হন ইব্রাহিম রাইসি। এর পরপরই খামেনির অনুমতি সাপেক্ষে মোহাম্মদ মোখবারকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। সংবিধান সংশোধনের পরবর্তী সময়ে ইরানের সপ্তম ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মোহাম্মদ মোখবার।
ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে মোহাম্মদ মোখবার ইরানের সিতাদের প্রেসিডেন্ট হিসেবে টানা ১৪ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। এটা ইরানের অন্যতম শক্তিশালী একটি অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান। মূলত দাতব্যকাজের জন্য এ প্রতিষ্ঠান বিশেষভাবে পরিচিত। সর্বোচ্চ নেতার সরাসরি তত্ত্বাবধানে এটা পরিচালিত হয়।
মোহাম্মদ মোখবারের নজরদারিতে সিতাদ করোনার নিজস্ব টিকা ‘কোভিরান বারেকাত’ তৈরির কাজ এগিয়ে নিয়েছিলেন। যদিও এই টিকার কার্যকারিতা নিয়ে এখনও প্রশ্ন রয়ে গেছে। বিভিন্ন প্রতিবেদনে জানা গেছে, এই টিকা নেয়ার পর অনেকেই জটিল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভুগেছেন।
এক সময় ইরানের খুজেস্তান প্রদেশের গভর্নর ছিলেন মোহাম্মদ মোখবার। ৬৮ বছর বয়সী শীর্ষ কূটনীতিক সুপ্রিম লিডার আলী খামেনির ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। তিনি আগামী ৫০ দিনের মধ্যে একটি নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তিন সদস্যের কাউন্সিলের অংশ হবেন।
মোখবার গত অক্টোবরে মস্কোতে গিয়েছিলেন যখন ইরান রাশিয়ার সামরিক বাহিনীকে ভূপৃষ্ঠ থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য মিসাইল ও ড্রোন দিতে রাজি হয়েছিলো। ২০১০ সালে ব্যালাস্টিক মিসাইল কার্যক্রমে অভিযুক্ত থাকার ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা তালিকায় মোখবারের নাম ছিলো।
অবশ্য দু’বছর পর মোখবারের নাম বাদ দেয় ইইউ। তবে, ২০১৩ সালে ইরান সম্পর্কিত ২৭টি কোম্পানিকে নিষেধাজ্ঞা তালিকায় অন্তভূক্ত করার সময় মোখবারের নামও ছিলো। ইরানের সর্বোচ্চ নেতার আস্থাভাজন হিসাবে পরিচিতি মোহাম্মদ মোখবার। নতুন প্রেসিডেন্ট হয়েই বৈঠক করেছেন খামেনির সঙ্গে।
উল্লেখ্য, রোববার আজারবাইজান সীমান্তে ইরানের সঙ্গে যৌথভাবে নির্মিত একটি বাঁধ উদ্বোধন করতে যান প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। সেখানে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভও ছিলেন। সেখান থেকে তিনটি হেলিকপ্টারের বহর নিয়ে ইরানের তাবরিজে ফিরছিলেন রাইসি ও তাঁর সঙ্গীরা।
পথে পূর্ব আজারবাইজানের জোলফা এলাকার কাছে দুর্গম পাহাড়ে প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বহনকারী বেল-২১২ মডেলের হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়। অন্য দুটি হেলিকপ্টার নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছায়। এ দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন রাইসিসহ তার অন্যান্য সফরসঙ্গীরা। তার মরদেহ তাবরিজ শহরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।