বিদায় ইব্রাহিম রাইসি। হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে, নিজের জন্মভূমি উত্তর-পূর্ব ইরানের পবিত্র শহর মাশহাদে জানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে তাকে। এই শহরেই রয়েছে ইমাম রেজার মাজার।
মর্মান্তিক সেই হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রেসিডেন্ট রাইসির সাথে নিহত হয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ানসহ উচ্চপদস্থ আরও কয়েকজন কর্মকর্তা। ১৮ ঘণ্টার উদ্ধার অভিযানে খুঁজে বের করা হয় বিধ্বস্ত হেলিকপ্টার এবং রাইসিসহ সবার মৃত্যু আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে তেহরান সরকার।
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদোল্লাহিয়ানসহ ৮ আরোহী নিয়ে বেল ২১২ মডেলের হেলিকপ্টারটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ার পর সেটির অনুসন্ধানে ব্যাপক বেগ পেতে হয়েছিলো ইরানের অনুসন্ধান দলকে। দেশটির রেড ক্রিসেটের সঙ্গে যোগ দেয় বিভিন্ন দল ও বাহিনী।
এমনকি হেলিকপ্টারটি অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রের কাছেও সাহায্য চেয়েছিলো তেহরান। বিরূপ আবহাওয়ার সঙ্গে ভারী বৃষ্টির কারণে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় উদ্ধারকাজ কঠিন হয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত কিভাবে বিধ্বস্ত কপ্টারের অবস্থান পাওয়া গেলো, তা নিয়ে ওই সময়ে নানামুখী খবর আসছিলো।
ড্রোন প্রযুক্তিতে উন্নত হবার পরও ইরানি ড্রোন কেন নিয়োজিত করা হয়নি, সে প্রশ্নও উঠেছিলো। শেষ পর্যন্ত জানা গেলো, আসল কাজটি করেছে ইরানি ড্রোনই। রাইসিকে বহনকারী বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারের অবস্থান শনাক্তে নিজেদের তৈরি ড্রোন ব্যবহার করা হয় বলে বুধবার ইরানের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে।
ইরানের সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারটি খুঁজে পেতে তুরস্ক একটি ড্রোন পাঠিয়েছিলো। এতে নাইটভিশনসহ অত্যাধুনিক সরঞ্জাম ছিলো। তারপরেও হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের স্থান সঠিকভাবে শনাক্তে ব্যর্থ হয় ড্রোনটি। পরে ড্রোনটি তুরস্কে ফিরে যায়।
শেষ পর্যন্ত, দুর্ঘটনার পরদিন সোমবার ভোরে ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর ড্রোন ও স্থলভাগে উদ্ধারকারী বাহিনী হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের সঠিক স্থান উদঘাটন করে। সেই ড্রোনটি ইরানের নিজস্ব প্রযুক্তিতেই তৈরি করা হয়। তবে দ্রুততম সময়ে আধুনিক ড্রোন পাঠানোয় তুরস্কের প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানানো হয়েছে।
গত সোমবার ভোরে পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের দুর্গম পাহাড়ি জঙ্গলের ভেতরে বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারটির খোঁজ পাওয়া যায়। এরপর সব আরোহীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে তেহরান। হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের কারণ অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাগেরি।
গত রোববার আজারবাইজানের সীমান্তবর্তী এলাকায় দুই দেশের যৌথভাবে নির্মিত একটি বাঁধ উদ্বোধন করে সেখান থেকে ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের রাজধানী তাবরিজে ফিরছিলেন প্রেসিডেন্ট রাইসি। পথে স্থানীয় সময় দুপুরের দিকে হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়।
হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই ব্যাপক অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। এতে সহায়তা করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া ও তুরস্ক। ১৮ ঘণ্টার চেষ্টায় হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের স্থানটি খুঁজে পাবার পরই দ্রুত গতিতে নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয় তাবরিজে।