পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমের মতো, গাজা উপত্যকাকেও নিজেদের করে নিতে চায় ইসরাইল। এনিয়ে গত বছর বোমা ফাটিয়ে ছিলেন মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি।
তিনি দাবি করেন, গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজায় হামলা শুরুর পর ইসরাইলের তরফে এক অদ্ভুত প্রস্তাব পায় কায়রো।
সেই প্রস্তাবে ইসরাইল জানিয়েছিলো, গাজা উপত্যকায় ২২ লাখ ফিলিস্তিনিকে মিশর আশ্রয় দিলে, বিনিময়ে তারা দেশটির ১৬০ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক ঋণ মওকুম করে দেয়ার ব্যবস্থা নেবে। ইসরাইলের এমন ষড়যন্ত্রের আভাস আগেই টের পেয়েছিলেন তিনি, তাই শরণার্থীদের ঢলকে মিশরে ঢুকতে দেননি তিনি।
ইসরাইলি হায়েনারা যে গাজা উপত্যকাকে পুরোপুরি মনুষ্যহীন ভূখণ্ডে পরিণত করতে চায়, সেই অপ্ত বাক্য আবারও উচ্চারিত হলো মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক এক বিশ্লেষকের কণ্ঠে। তার মতে, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের তাড়িয়ে দিতে এবার ইসরাইল ‘দুর্ভিক্ষ’ নামে মানবসৃষ্ট অস্ত্রের ওপর ভর করতে চাইছে।
মধ্যপ্রাচ্য কাউন্সিল অন গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের একজন বিশ্লেষক আদেল আবদেল গাফর কাতারভিক্তিক আল জাজিরা টেলিভিশনকে বলেছেন, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা ছেড়ে যাওয়ার জন্য ফিলিস্তিনি জনগণকে চাপ দিতে গাজায় দুর্ভিক্ষকে ‘যুদ্ধের অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করছে ইসরাইল।
তিনি বলেন, ইসরাইলের অনেক উগ্র ডানপন্থী রাজনীতিবিদদের ‘স্বপ্ন’ হলো ইসরাইলিদের জন্য নয়নাভিরাম বসতি স্থাপনের লক্ষ্য নিয়ে ফিলিস্তিনিদের জন্য গাজাকে ‘অবাসযোগ্য’ করা। তাদের মনোজগতে রয়েছে গাজাতে ইহুদিদের জন্য একটি অত্যাধুনিক সুবিধা ও বিনোদনময় একটি আবাসভূমি গড়ে তোলা।
তিনি বলেন, স্কুল, হাসপাতাল, অবকাঠামো ধ্বংস করে এরিই মধ্যে গাজাকে প্রায় বসবাসের অযোগ্য করে তুলছে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর লেলিয়ে দেয়া হায়েনারা। সেখানে ত্রাণও প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। তারা চায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেন আরও শরণার্থী নিতে বাধ্য হয়, গাজা জনশূন্য হবে।
মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষক আদেল আবদেল গাফর আরও বলেন, আমি মনে করি ইসরাইল চাইছে, যত বেশি সংখ্যক ফিলিস্তিনি গাজা ছেড়ে অন্যত্র উদ্বাস্তু হোক। এতে করে, তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথ আরও সহজ হবে। এভাবেই হয় একদিন রামাল্লাও চলে যাবে ইসরাইলের অধীনে।
ফিলিস্তিনের ভূমি অসংখ্য নবী-রাসূলের স্মৃতিবিজড়িত, এর আশপাশে অনেক নবী-রাসূলের সমাধি রয়েছে। এটি দীর্ঘকালের ওহি অবতরণস্থল, ইসলামের কেন্দ্র এবং ইসলামি সংস্কৃতির চারণভূমি। মুসলমানদের পবিত্র এই ভূমি ভাঙা-গড়ার সবশেষ পর্বে, এখন ইহুদিদের দখলদারির করাল গ্রাসে আক্রান্ত।
৬৪৮ সালে হযরত ওমরের খেলাফতকালে মুসলমানরা ফিলিস্তিন জয় করে নেয়। ১০৯৬ সালে খ্রিস্টানরা তা পুনর্দখল করে নেয়। ১১৮৭ সালে সিপাহশালার সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়ুবী আবার জেরুজালেম শহর জয় করেন। এরপর থেকে খ্রিষ্টান ও ইহুদি চক্র ফিলিস্তিনে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র করতে থাকে।