ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন- হামাস প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার ইসরাইলি সেনা বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন গাজায় হামাসের প্রধান খলিল হায়া। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে। ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার প্রায় ৮০ দিন পর হামাসের বর্তমান প্রধান সিনওয়াকেও হত্যা করলেন ‘আধুনিক হিটলার’ হিসাবে খ্যাত নেতানিয়াহু।
ইয়াহিয়া সিনওয়ার নিহত হবার খবর নিশ্চিত করে টেলিভিশনে দেয়া এক বক্তব্যে খলিল হায়া বলেন, গাজায় ইসরাইলি হামলা বন্ধ এবং গাজা থেকে দখলদার সেনাদের প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত হামাসের হাতে বন্দী কোন জিম্মিদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে না। বক্তব্য সিনওয়ারের মৃত্যুতে গভীর শোকও প্রকাশ করেন।
সিনওয়ারের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে হায়া বলেন, তিনি ছিলেন অটল, সাহসী ও নির্ভীক। আমাদের মুক্তির জন্য তিনি তার জীবন উৎসর্গ করেছেন। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও সিনওয়ার মাথা উঁচু করে ছিলেন। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত শত্রুদের দিকে গুলি চালিয়েছেন। তিনি তার পুরো জীবন একজন ন্যায়নিষ্ঠ যোদ্ধা হিসেবে কাটিয়েছেন। ছোটবেলা থেকেই সিনওয়ার ছিলেন একজন অসীম সাহসী যোদ্ধা।
হামাসের রাজনৈতিক শাখার আরেক সদস্য বাসেম নাইম বলেছেন, ফিলিস্তিনি জনগণের সংগ্রাম-আন্দোলন এখানেই শেষ নয়। আমরা বিশ্বাস করি- হয় বিজয়, না হয় শাহাদাত।
বাসেম নাইম এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ইসরাইল বিশ্বাস করে যে আমাদের নেতাদের হত্যা করা মানে আমাদের আন্দোলন এবং ফিলিস্তিনি জনগণের সংগ্রাম সমাপ্ত হয়ে যাবে। তবে আমাদের নেতাদের হত্যার মাধ্যমে গোষ্ঠীটিকে নির্মূল করা যাবে না।
এর আগের হামাস নেতাদের হত্যার কথা উল্লেখ করে নাইম আরও বলেন, ইসরাইল এই প্রথম এমন কিছু বলেছে না। তবে নিহতরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আইকন হয়ে উঠেছে। হামাস একটি মুক্তিকামী আন্দোলন, যাকে নির্মূল করা যায় না। যে দলটি বিশ্বাস করে- তাদের ভাগ্যে হয় বিজয়, না হয় শাহাদাত।
নেতাদের হারানো বেদনাদায়ক উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রিয় মানুষদের, বিশেষ করে অসাধারণ নেতাদের হারানো খুবই বেদনাদায়ক। কিন্তু আমরা নিশ্চিত যে শেষ পর্যন্ত আমরা বিজয়ী হব; এটি সেই সমস্ত লোকদের জন্য যারা তাদের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে জীবন দিয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার ইসরাইলি সামরিক বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেত যৌথ বিবৃতিতে জানায়, বুধবার ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর অভিযানে দক্ষিণ গাজায় তিনজন নিহত হন। তিন নিহতের পরিচয় শনাক্তের পর সিনওয়ারের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরাইল কাতজ।
ইয়াহিয়া সিনওয়ার তার জীবনের দুই দশকেরও বেশি সময় ইসরাইলের বিভিন্ন কারাগারে কাটানোর ফলে ইসরাইলের কাছে তার জেনেটিক তথ্য সংরক্ষিত ছিল। সেই তথ্যের সঙ্গে মৃতদেহের নমুনা মিলিয়ে দেখে তারা সিনওয়ারের মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হন, জানায় আইডিএফ।
এর আগে গত জুলাইয়ে তেহরানে গুপ্ত হামলা চালিয়ে হামাসের তৎকালীন প্রধান ইসমাইল হানিয়াহকে হত্যা করে ইসরাইল। এরপর, হামাস প্রধানের দায়িত্ব নেন ইয়াহিয়া সিনওয়ার। তার মৃত্যুতে প্রতিরোধ আন্দোলন থেমে যাবে না বলে জানিয়েছে হামাস। বরং সামনের সময়ে আরও জোরালো হবে প্রতিরোধ যুদ্ধ।