অব্যাহত ইসরাইলি হামলায় লেবাননজুড়ে প্রায় ১০ লাখ মানুষ তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন বলে জানিয়েছেন লেবানিজ প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি। রোববার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, প্রায় এক লাখ ১৮ হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষ ৭৭৮টি নির্ধারিত আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে। কিন্তু প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়েও অনেক বেশি।
মিকাতি বলেন, ১০ লাখ মানুষ কয়েকদিনের মধ্যে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত হয়েছে, যা এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় স্থানান্তরের ঘটনা হতে পারে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
চলতি মাসের শুরুর দিকে দক্ষিণ লেবাননে হামলা শুরু করে ইসরাইল। ওই সময় প্রাথমিকভাবে ওই এলাকা থেকে লোকজনকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয় ইসরাইলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ)।
এরপর শনিবার ভোরে আইডিএফ দক্ষিণাঞ্চলের একটি বিশাল এলাকা থেকে লোকজনকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। গত বছর গাজায় জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির নির্দেশনার মতো, লেবাননেও তারা একই কাজ করে। এর ফলে ওইদিনই ওই অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ রাজধানী বৈরুতে পৌঁছানোর চেষ্টা করে।
তাদের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয় বৈরুতের স্কুল-কলেজের ভবনগুলো। অনেকেই আশ্রয় নেন বিভিন্ন নির্মাণাধীন ভবনে। অনেকেই কোথাও জায়গা না পেয়ে রাজধানীর রাস্তায় ও সমুদ্র সৈকতে আশ্রয় নিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা লুথেরান ওয়ার্ল্ড রিলিফের লেবাননের পরিচালক আলি হিজাজি বলেছেন, বাস্তুচ্যুত লেবাননের মানুষকে কয়েক মিনিটের মধ্যে তাদের বাড়িঘর ছাড়তে হয়েছে। তাই তারা সামান্য জিনিসপত্র ছাড়া সঙ্গে আর কিছুই নিতে পারেননি। অনেকে শুধু প্রাণ হাতে নিয়েই পালিয়ে এসেছে।
২৫ বছর বয়সী আয়া আইয়ুব বিবিসিকে বলেছেন, তিনি তার ছয়জনের পরিবার নিয়ে দক্ষিণের তাহুয়েতেত আল-গাদির এলাকা থেকে পালিয়েছেন। কারণ তার বাড়ির চারপাশের সব ভবন সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। বর্তমানে তিনি বৈরুতের একটি নির্মাণাধীন বাড়িতে আরও ১৬ জনের সঙ্গে অবস্থান করছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা শুক্রবার বাড়ি ছেড়েছি। কিন্তু যাওয়ার কোনও জায়গা ছিল না। রাত দুইটা পর্যন্ত আমরা রাস্তায় ছিলাম। এরপর কিছু লোক আমাদের একটি নির্মাণাধীন ভবনে নিয়ে যান। আমরা রাতের বেলায় মোমবাতি জ্বালিয়ে থাকি। খাবার ও পানি বাইরে থেকে আনতে হয়।’
৩৪ বছর বয়সী সাংবাদিক সারা তোহমাজ বিবিসিকে বলেছেন, মা এবং দুই ভাইবোনের সাথে গত শুক্রবার বাড়ি ছেড়ে সিরিয়া হয়ে গাড়িতে করে জর্ডানে এসেছেন তিনি। জর্ডানে পৌঁছাতে তাদের প্রায় ১০ ঘণ্টা সময় লেগেছে।
তিনি বলেন, ‘আমার মায়ের আত্মীয়স্বজনরা জর্ডানে থাকে। সেজন্য আমরা এখানে থাকার সৌভাগ্য অর্জন করেছি। জানি না নিজ দেশে কখন ফিরতে পারবো।’
প্রধানমন্ত্রী মিকাতি বলেন, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সবার প্রয়োজন মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্র এবং হাসপাতালগুলোর ওপর ক্রমবর্ধমান চাপ রয়েছে।
হিজাজি বলেছেন, ‘মানুষ সত্যিই আতঙ্কিত এবং উদ্বিগ্ন। এ সংকট আরও দীর্ঘস্থায়ী হবে কিনা, তা নিয়ে তারা সত্যিই এক অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে।’