নাসারুল্লাহর ওপর চালানো হামলায় তার সাথে সাথে হিজবুল্লাহর আরও ২০ জন জ্যেষ্ঠ নেতা নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরাইল। শুক্রবার লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণ উপকণ্ঠে হিজবুল্লাহ-নিয়ন্ত্রিত দক্ষিণ শহরতলির দাহিয়েহ এলাকায় এ হামলা চালানো হয়।
হামলার সময় ভূ-গর্ভস্থ সদর দপ্তরে হিজবুল্লাহ নেতা নাসারুল্লাহর সাথে ইরান-সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠীটির বিভিন্ন স্তরের ওই নেতারা বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। খবর বিবিসি’র।
ইসরাইলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) দাবি করেছে, দক্ষিণ ফ্রন্টের নেতা আলী কারাকি, নাসরুল্লাহর নিরাপত্তা ইউনিটের প্রধান ইব্রাহিম হুসেইন জাজিনি ও ‘নাসারুল্লাহর দীর্ঘদিনের আস্থাভাজন এবং উপদেষ্টা’ সামির তৌফিক ডিবকেও ওই হামলায় হত্যা করা হয়েছে।
হিজবুল্লাহর সদর দপ্তরটি বেশ কয়েকটি বেসামরিক ভবনের নীচে বিন্যস্ত ছিলো বলেও জানিয়েছে আইডিএফ।
শনিবার হিজবুল্লাহর প্রতিরোধমূলক নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান এবং এর কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য নাবিল কাওকের নিহত হবার বিষয়টি এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছে হিজবুল্লাহ।
দক্ষিণ শহরতলির দাহিয়েহ এলাকা বৈরুতে হিজবুল্লাহর ‘স্পন্দিত হৃদয়’ ছিলো। এখন সেটিকে মনে হচ্ছে ভূতের শহর। দক্ষিণ শহরতলির রাস্তাগুলি এখন খালি এবং দোকানগুলি বন্ধ।
হাজার হাজার মানুষ এলাকা ছেড়ে ইতিমধ্যে চলে গেছে এবং আরও কিছু মানুষ এখনও পায়ে হেঁটেই পালানোর চেষ্টা করছে।
ইসরাইলি বিমান হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ধ্বংসস্তূপ থেকে এখনও ধোঁয়া বেরোচ্ছে, বাতাসে বিস্ফোরকের গন্ধ। প্রতি কয়েক মিনিটে লোকজন নিজেরাই ক্ষয়ক্ষতি দেখতে আসছে।
এদিকে, ইসরাইল লেবানিজ জনসাধারণকে হিজবুল্লাহর সাথে যুক্ত সাইটগুলি থেকে দূরে থাকার জন্য সতর্ক করেছে। তারা গোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে আরও আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
রোববারও ইসরাইলি সামরিক বাহিনী দাহিয়েহের ওপর আরেকটি হামলা চালিয়েছে। হামলার পর ওই এলাকা থেকে ধোঁয়ার বিশাল স্তম্ভ উঠতে দেখা গেছে।
এদিকে, হিজবুল্লাহ কীভাবে এ হামলার প্রতিক্রিয়া জানাবে, তা নিয়ে এখনও প্রশ্ন রয়েছে। সশস্ত্র গোষ্ঠীটির কাছে এখনও অস্ত্রের একটি বিশাল ভাণ্ডার রয়েছে। ইসরাইলের গভীরে আঘাত করতে সক্ষম দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রও রয়েছে সে ভাণ্ডারে।
হিজবুল্লাহ দুর্বল হয়েছে, কিন্তু পরাজিত হয়নি। উত্তর ইসরাইলে তাদের আক্রমণের তীব্রতা কমেছে, কিন্তু থামেনি। শনিবারের বিবৃতিতে নাসরুল্লাহর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করার পাশাপাশি ইহুদিবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া এবং গাজা, ফিলিস্তিন, লেবানন ও এর জনগণকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে হিজবুল্লাহ।
এদিকে, নাসারুল্লাহ ও হিজবুল্লাহর শীর্ষনেতাদের হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) চিফ অব স্টাফ লে. জেনারেল হারজি হ্যালেভি এক ভিডিওবার্তায় বলেন, ‘এখানে বার্তা খুব পরিষ্কার। ইসরাইলি নাগরিকদের যারা হুমকি দেবে, তাদের কীভাবে খুঁজে বের করতে হয়, সেটা আমরা জানি। সেটা উত্তরে, দক্ষিণে কিংবা আরও দূরে হলেও আমরা তাদের খুঁজে পাবো।’