সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেট ভবনে দখলদার বাহিনীর বিমান হামলার জবাবে ইসরাইলি ভূখণ্ড লক্ষ্য করে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইরান। ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি শনিবার রাতে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের এ মিশনের নাম দেয়া হয়েছে ‘ট্রু প্রোমিজ’ বা ‘সত্য প্রতিশ্রুতি'।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের ইরানি কনস্যুলেটে ইসরাইলি হামলায় দু’জন ব্রিগেডিয়ার জেনারেলসহ সাত ইরানি সামরিক উপদেষ্টা হত্যার প্রতিশোধ নিতে আইআরজিসি’র অ্যারোস্পেস ডিভিশন ইসরাইলের সামরিক স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে শত শত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।
ইরানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম পার্সটুডে'সহ মধ্যপ্রাচ্যের গণমাধ্যমগুলো ইরানের এ প্রতিশোধমূলক হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছে। তবে বরাবরের মতো এখন পর্যন্ত হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি ইসরাইল।
ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মাদ রেজা আশতিয়ানি বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশ যদি ইসরাইলকে ইরানে হামলা চালানোর জন্য তার ভূখণ্ড বা আকাশসীমা ব্যবহার করার অনুমতি দেয় তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আইআরজিসির বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, জাতিসংঘের আইন অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী যেকোনো দেশের কূটনৈতিক মিশন যুদ্ধের সময়ও সর্বোচ্চ সুরক্ষা পায়। কিন্তু জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ যখন ইরানি কূটনৈতিক মিশনে হামলার ১০ দিন পরও এর নিন্দা জানাতে ব্যর্থ হয় তখন তেহরান ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
এ হামলায় কৌশলগত গোয়েন্দা সক্ষমতা ব্যবহার করা হয় এবং ইসরাইলের সামরিক স্থাপনাগুলোকে টার্গেট করে হামলা চালিয়ে সেগুলো সফলভাবে ধ্বংস করে দেয়া হয় বলে দাবি তেহরানের।
আইআরজিসি’র বিবৃতিতে ইসরাইলের সবচেয়ে বড় পৃষ্ঠপোষক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলা হয়, ইরানের স্বার্থে আঘাত হানার যেকোনো প্রচেষ্টায় আমেরিকা অংশগ্রহণ করলে মধ্যপ্রাচ্যের মার্কিন লক্ষ্যবস্তুগুলোতে ‘নিষ্পত্তিমূলক ও অনুশোচনা সৃষ্টিকারী’ হামলা চালানো হবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইসরাইলের সব ধরনের ধ্বংসযজ্ঞের পুরো দায় যুক্তরাষ্ট্রের এবং এই শিশু হত্যাকারী সরকার যদি এখনই থেমে না যায় তাহলে পরবর্তী যেকোনো পরিস্থিতির জন্য তেল আবিবকে দায়ি থাকতে হবে।
ওই বিবৃতির শেষাংশে ইরানের বিরুদ্ধে হামলায় তৃতীয় যেকোনো দেশকে তার ভূমি ব্যবহার করতে দেয়ার ব্যাপারে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।
এর আগে ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে হামলা চালিয়ে শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাসহ ১৩ জনকে হত্যা করে ইসরাইল।
তেহরান ওই হামলার প্রতিশোধ নেয়ার হুমকি দেয়ার পরপরই ইসরাইলি সেনাবাহিনী তাদের কমব্যাট ইউনিটের ছুটি বাতিল করে। পাশাপাশি জোরদার করা হয়েছে ইসরাইলের বিমান ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এমনকি তলব করা হয়েছে রিজার্ভ সেনাদের।
এছাড়াও হামলার ভয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতদের সরিয়ে নেয়ার পাশাপাশি দূতাবাসগুলো খালি করতে শুরু করেছে ইসরাইল। এরইমধ্যে কমপক্ষে ২৮টি দূতাবাস বা কনস্যুলেট অস্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
তবে শত চেষ্টার পরও ইরানের হামলা ঠেকাতে পারেনি মধ্যপ্রাচ্যের কসাই খ্যাত বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সরকার।
গেলো বছরের অক্টোবর মাসের ৭ তারিখে ইসরাইলে এই দশকের সবচেয়ে বড় সামরিক অভিযান চালায় গাজার হামাস সরকার। এর পরপরই গাজায় বিমান হামলা ও স্থল হামলা শুরু করে ইসরাইল। এ আগ্রাসনে ৩৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন ৭৫ হাজারের বেশি মানুষ। আর এ গনহত্যাকে কেন্দ্র করে নতুন করে দ্বন্দ্ব জড়ায় মধ্যপ্রাচ্যের দুই চিরশত্রু ইরান-ইসরাইল।