গাজা উপত্যকায় সাত মাসের বেশি সময় ধরে চলা ইসরাইলি গণহত্যা থেকে রেহাই পেতে দক্ষিণের রাফাহ শহরে আশ্রয় নিয়েছিলেন হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি। কিন্তু দখলদার ইসরাইলি বাহিনী সেখানেও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। আশ্রয় শিবিরের তাঁবুতে বসবাসকারীদের মধ্যে অন্তত ৪৫ জন আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। আহত হয়েছেন কয়েকশ' মানুষ।
রোববার স্থানীয় সময় রাত পৌনে ৯টার দিকে রাফাহতে অন্তত আটটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইসরাইলি বাহিনী। হামলার পরপরই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এর নিন্দা জানিয়েছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক বার্তায় বলেছেন, গাজায় কোনো নিরাপদ জায়গা নেই। এই ভয়াবহতা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।
এদিকে মঙ্গলবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এই হামলার বিষয়ে জরুরি বৈঠকে বসতে যাচ্ছে।
যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার মধ্যস্থতাকারী দেশগুলো কাতার ও মিশরসহ আশেপাশের বিভিন্ন দেশ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
মিশর বলেছে, গাজা উপত্যকায় মৃত্যু ও ধ্বংসের সুযোগ বিস্তৃত করে একে বসবাসের অনুপযোগী করে তোলার লক্ষ্যে প্রতিরক্ষাহীন বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে।
ইসরাইলের অন্যতম মিত্র জর্ডান এ হামলাকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বর্ণনা করেছে।
মধ্যপ্রাচ্যের আরেক ক্ষমতাধর দেশ সৌদি আরব অব্যাহত এই গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। রিয়াদ বলছে, ইসরাইলকে এ গণহত্যা বন্ধ করতে হবে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ইসরাইলি নেতাদের খুনি আখ্যা দিয়ে তাদের জবাবদিহির আওতায় আনার অঙ্গীকার করেছেন।
কাতার এ হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের বিপদজনক লঙ্ঘন হিসেবে বর্ণনা করেছে।
রাফাহতে নতুন করে হামলার প্রতিক্রিয়ায় মঙ্গলবার স্পেন, আয়ারল্যান্ড এবং নরওয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে।
জাতিসংঘের ১৪০টিরও বেশি সদস্য রাষ্ট্র এখন পর্যন্ত এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এদের মধ্যে পশ্চিমা বিশ্বের দেশ খুব কমই আছে।
ইসরাইল এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করে সোমবার মাদ্রিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ ঘোষণা করে ১জুন থেকে ফিলিস্তিনিদের সেবা দেয়া বন্ধ করতে জেরুজালেমে স্পেনের কনস্যুলেটকে নির্দেশ দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি নিন্দা না জানালেও দেশটির নিরাপত্তা পরিষদের এক মুখপাত্র বলেছেন, গাজার বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষায় ইসরাইলকে অবশ্যই সম্ভাব্য যে কোনো সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিতে হবে।
তবে বরাবরের মতো গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে ইসরাইল সরকার বলছে, রাফাহর ঘটনা দুঃখজনক। তারা এই ঘটনার তদন্ত করছে।
এর আগে গেলো অক্টোবর মাসের ৭ তারিখে ইসরাইলে এই দশকের সবচেয়ে বড় সামরিক অভিযান চালায় গাজার হামাস সরকার। এর পরপরই গাজায় বিমান হামলা ও স্থল হামলা শুরু করে ইসরাইল। হামলায় এখন পর্যন্ত ৪০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই শিশু ও নারী। আহতের সংখ্যা ৮০ হাজার ছাড়িয়েছে।