গাজা উপত্যকায় সন্তান হারিয়ে এক মা ঘুরছেন দিকভ্রান্ত হয়ে, তো অন্য মায়ের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে আকাশ-বাতাস। একজন মা বাচ্চাদের জন্যে খাবার বানাচ্ছিলেন। কিন্তু খাওয়াতে পারলেন না। এভাবে প্রতিদিন শতশত নাড়ি ছেঁড়া ধনকে হারাচ্ছেন ফিলিস্তিনি মায়েরা।
তাঁদের জন্যে কি কোন দিবস আছে? মা দিবস। বছর ঘুরে ঘুরে মা দিবস আসে। সারাবিশ্বের সন্তানেরা মায়ের প্রশংসা করে শুভেচ্ছাবার্তা দেন। কিন্তু গাজার মায়েদের জন্যে আসেনা তেমন শুভেচ্ছা কিংবা ভালোবাসার বার্তা। যেখানে মা অথবা শিশু! কে বাঁচবেন, কে নিঃশ্বাস নেবেন, সেটিই চূড়ান্ত অনিশ্চয়তা।
মা- এই একটি শব্দের মাহাত্ম অপরসীম। যার কোন তুলনা হয়না তিনি মা। মৃত্যুর মুখ থেকে সেবা-ভালোবাসা আর দোয়া দিয়ে সন্তানদের ছিনিয়ে আনা মা। গাজার মায়েদের ধৈর্য্য সেক্ষেত্রে বিশ্বের সকল মায়ের তুলনায় বেশিই বলা চলে। কারণ প্রতিনিয়ত সন্তানের নিথর দেহ চোখের সামনে দেখতে দেখতে অভ্যস্ত তাঁরা।
বাকরুদ্ধ তারা। জীবনের এই চলার পথে বোমা-মৃত্যু তাঁদের কাছে খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। তবুও গাজার মায়েরা কাঁদেন! মা তো! কাঁদতেই হবে। ইসরাইলি হায়েনাদের লোলুপ দৃষ্টি এখন রাফাহতে। প্রতিনিয়তই তাঁদের কামান-গোলার আঘাতে ঝরে পড়ছে ছোট্ট প্রাণগুলো। যারা বোমা মারছে তাঁরাওতো মায়ের সন্তান।
যারা মারা পড়ছে তারাও মায়ের সন্তান। এই বোধটুকু নেই যুদ্ধবাজ হায়েনাদের। কোথায় বোমা মারছে, কার ওপর মারছে সেসবের কোন তোয়াক্কাও করছেনা পশ্চিমা মদদপুষ্ট ইসরাইল। এক শিশুর নিথর দেহ দেখে জমিনের বুকে দাঁড়িয়ে অন্য সন্তানকে বুকে চেপে ধরছে মা-এই দৃশ্যগুলো কি দেখতে পায়না ইহুদি মায়ের সন্তানেরা কিংবা তাদের মায়েরা?
সন্তানদের নিয়ে একটু নিশ্বাস নিতে মায়েদের এই অনন্ত ছুটেচলা। বছরের পর বছর ধরে গাজার মায়েদের অবধারিত চাকরি এটি। সন্তান পালন তারপর তাঁদের প্রাণ বাঁচানোর নিরন্তর লড়াই। এসব মায়েরা জানেন না কোথায় যাবেন। কোথায় থাকবেন, শুধু জানেন পালাতে হবে।
নাড়ি ছেড়া ধনকে বোমার আগুন থেকে বাঁচাতে হবে। ঘোড়ার গাড়িতে ৪ সন্তানকে নিয়ে বসা মা বলছেন, এই শিশুর জন্ম যুদ্ধের সময়ে হয়েছে, ওর কি দোষ। ওর জন্ম হয়েছে রাফাহতে। কোন জামাকাপড় নেই। এই শিশুদের কি দোষ। আমরা এখান থেকে ওখানে ছুটছি। কোথাও নিরাপদ জায়গা নেই।
আবার কেউ যানবাহনের অপেক্ষায় বসে আছেন পথের ধারে। নিত্যসরঞ্জাম নিয়ে ছুটছেন এদিক থেকে সেদিকে। এই গাজায় মায়ের পেটও নিরাপদ নয়, সেখানে সন্তানদের জন্যে মা দিবস বিলাসিতা ছাড়া আর কি হতে পারে।
এই শিশুরা হয়তো জানেওনা বিশ্বজুড়ে একটি দিবস আসে, যার নাম মা দিবস। যেদিন মাকে বিশেষভাবে স্মরণ করে সন্তানেরা। এই শিশুরা মাকে স্মরণ করে অবশ্যই- হয়তো তাঁদের মাথায় যখন বোমা ফেলে ইসরাইলি হায়েনারা। তখনই মা বলে ডাক দিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয় গাজার শতশত শিশু।