ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে গণহত্যা চালানোর ফলে জনপ্রিয়তা হারিয়ে আগেই কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল ইসরাইল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অধিকাংশ দেশের সরকার ইসরাইলি গণহত্যাকে সরাসরি সমর্থন দিলেও এসব দেশের জনগণ ইসরাইলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। কিন্তু কোনোভাবেই ইসরাইলি আগ্রাসন ঠেকাতে পারেনি বিশ্বের কোনো শক্তি। এমন পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনের ত্রাতা হিসেবে যুদ্ধের মাঠে আবির্ভূত হয়েছে ইরান। আর এতেই রাতারাতি মধ্যপ্রাচ্যের নায়ক বনে গেছে দেশটি। তেহরান থেকে টরেন্টো ছড়িয়ে পড়েছে আনন্দ-উল্লাস!
ইরানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম পার্সটুডে ও প্রেসটিভি'র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার রাতে ইসরাইলে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি’র ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর ইরানের রাজধানী তেহরানের রাস্তায় নেমে আসে দেশটির সাধারণ জনগণ। ব্যাপক আনন্দ-উল্লাস ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন তারা।
একইভাবে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন কানাডার টরেন্টো শহরের বাসিন্দারাও। এমনকি পিছিয়ে থাকেনি ইসরাইল অধিকৃত জেরুজালেম শহরের আরব বাসিন্দারা।
পার্সটুডে বলছে, শনিবার রাতে হামলা শুরুর পরপরই ইরানের জনগণ রাজধানী তেহরানের ফিলিস্তিন স্কয়ার এবং তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে প্রশস্ত রাস্তায় জড়ো হন। এ সময় তারা জাতীয় পতাকা নিয়ে অনেকটা নেচে-গেয়ে আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন এবং আইআরজিসি-কে সমর্থন জানিয়ে নানা স্লোগান দেন।
আনন্দ-উল্লাসে অংশ নেয়া এক ইরানি নাগরিক প্রেস টিভিকে জানান, ক্রিমিনাল ও শিশু হত্যাকারী ইসরাইলের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত জবাব দেয়ায় আমি সত্যিই বিপ্লবী গার্ড বাহিনী নিয়ে গর্বিত।
একই ধরনের আনন্দ-উল্লাস প্রকাশ করা হয়েছে ইরানের পবিত্র মাশহাদ নগরীর ইমাম রেজা (আ)-এর মাজারের সামনে।
ইরানি হামলার পর ফিলিস্তিনের আল-আকসা মসজিদের সামনে আনন্দ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে।
এছাড়া, ফিলিস্তিনপন্থী লোকজন কানাডার টরেন্টো শহরে মিছিল সমাবেশ করেছেন। সেখানে তারা বিভিন্ন রকম আতশবাজি এবং বেলুন ও ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে মিছিল করেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের রাস্তায় একইভাবে মিছিল না হলেও, এসব দেশের সামাজিক মাধ্যম ছিলো ফিলিস্তিনপন্থীদের দখলে। লাখ লাখ নেটনাগরিক ইরানের এ প্রতিশোধমূলক হামলাকে সমর্থন জানিয়েছেন।
তাদের অনেকেই জানান, গাজায় গণহত্যা শুরুর পর থেকে তারা হতাশ ছিলেন। কারণ, ইসরাইলি বর্বরতাকে রুখে দিতে সে অর্থে কোনো দেশ সরাসরি ফিলিস্তিনের পাশে দাড়ায়নি। ইরান সেই কাজটি করেছে। এর ফলে ইসরাইল নতুন করে বিপাকে পড়েছে।
অনেকে আবার লিখেছেন, ইরানের নিজেকে রক্ষা করার অধিকার রয়েছে। ইরান এগিয়ে আসলে ফিলিস্তিনের শিশুদের আর এভাবে মরতে হবে না। এভাবেই যদি এই যুদ্ধের অবসান হয়, তাহলেও ক্ষতি নেই। যেকোনো মূল্যে ইসরাইলকে থামাতে হবে।
তবে ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলার ফলে পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে নতুন করে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে পারে এমন আশঙ্কাও করছেন অনেকে। তারা সব পক্ষকে শান্ত থাকতে আহবান জানিয়েছেন।
এর আগে ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে হামলা চালিয়ে শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাসহ ১৩ জনকে হত্যা করে ইসরাইল। এর জবাবে শনিবার ইসরাইলে হামলা চালায় তেহরান।
তবে মূল ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিলো গেলো বছর। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসের ৭ তারিখে ইসরাইলে এই দশকের সবচেয়ে বড় সামরিক অভিযান চালায় গাজার হামাস সরকার। এর পরপরই গাজায় বিমান হামলা ও স্থল হামলা শুরু করে ইসরাইল। এ আগ্রাসনে ৩৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন ৭৫ হাজারের বেশি মানুষ। আর এ গনহত্যাকে কেন্দ্র করে নতুন করে দ্বন্দ্ব জড়ায় মধ্যপ্রাচ্যের দুই চিরশত্রু ইরান-ইসরাইল।