হামাসকে নির্মূল আর বন্দিদের ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দিয়ে মাসের পর মাস ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ধ্বংসযজ্ঞ আর হত্যালীলা চালালেও এখন পর্যন্ত কোন লক্ষ্যই অর্জন করতে পারেনি ইসরাইল। এই ব্যর্থতার জন্য নিজ ঘরেই অনেক থেকেই জনরোষের মুখে আছে নেতানিয়াহুর সরকার।
গাজায় বন্দি মুক্তির জন্য হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির জন্য ইসরাইলের নাগরিকরা দফায় দফায় বিক্ষোভ এবং প্রতিবাদ সমাবেশ করে আসছে। কিন্তু কোন কিছুতেই কর্ণপাত না করে গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন দেশটির ‘খুনি’ শাসক বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তবে দমে যাবার পাত্র নয় ইসরাইলের জনতা।
রোববার কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, গাজায় আটক বন্দিদের ফিরিয়ে আনার দাবিতে ইসরাইলে রাস্তায় বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার মানুষ। বিক্ষোভের সময় তারা সেনা সদরদপ্তরের পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি ভবনের সামনে সমবেত হন এবং নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে স্লোগান দেন।
গত দুই সপ্তাহে গাজা থেকে ৬ বন্দির লাশ উদ্ধারের পর ইসরাইলে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। গত সপ্তাহের বিক্ষোভে কয়েক লাখ মানুষ অংশ নিয়েছিলো। শনিবার বিক্ষোভকারীরা যুদ্ধ-বিধ্বস্ত গাজার বিভিন্ন অঞ্চলে বন্দি প্রায় ১০০ জনকে ফিরিয়ে আনতে হামাসের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছানোর আহবান জানায়।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বন্দিদের পরিবার জানিয়েছে, বন্দিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের কর্মকাণ্ডে তারা হতাশ। অনেকে চুক্তিতে পৌঁছতে না পারার জন্য তারা নেতানিয়াহুকে দোষারোপ করেছেন। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য নেতানিয়াহু যুদ্ধ বন্ধ করতে চান না বলে অভিযোগ তাদের।
গাজায় বন্দি ইসরায়েলি সেনা নিমরোদ কোহেনের ভাই সংবাদমাধ্যমকে বলেন, যতদিন নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকবেন, এই যুদ্ধ অনির্দিষ্টকালের জন্য চলতে থাকবে এবং কোনও জিম্মি চুক্তি হবে না। জিম্মিদের জীবন বাঁচাতে নেতানিয়াহুকে অবশ্যই ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে।
কোহেনের ভাই ইয়োটাম কোহেন বলন, চুক্তি-বিনাশকারী এই সরকার বন্দিদের পরিত্যাগ করছে এবং তাদের মৃত্যুর মুখে ছেড়ে দিয়েছে। যতদিন নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকবেন, এই যুদ্ধ অনির্দিষ্টকালের জন্য চলবে এবং কোনও বন্দি চুক্তি হবে না। বন্দিদের জীবন বাঁচাতে নেতানিয়াহুকে অবশ্যই সরাতে হবে।
আল জাজিরার হামদাহ সালহুত জর্ডানের রাজধানী আম্মান থেকে জানান, ইসরাইলি জনগণ নেতানিয়াহুর প্রতি ক্রমশ হতাশ হয়ে পড়ছে। তারা বলছে- তিনি (নেতানিয়াহু) যোগ্য নন বা চুক্তি মেনে নিতে ইচ্ছুক নন। তারা বলছেন- নেতানিয়াহু এবং তার সরকার বন্দিদের মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য কিছুই করছে না।
উল্লেখ্য, গত অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। টানা ১১ মাসেরও বেশি সময় ধরে চালানো এই হামলায় নিহত হয়েছেন ৪১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। তবে এরপরও হামাসের হাতে আটক থাকা বেশিরভাগ বন্দিকেই উদ্ধার করতে পারেনি ইসরাইল।
গেলো ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরাইল গাজায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরাইলি হামলায় হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। এছাড়া ইসরাইলি আগ্রাসনে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।