হামাস! এখন শুধু ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনই নয়, সারা বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক। স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখা এই সংগঠনটি, যুগ যুগ ধরে জায়নবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে যে সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলেছে তা এক কথায় তুলনাহীন এবং অবিস্মরণীয়ও বটে।
দখলধার ইসরাইলের বিরুদ্ধে বছরের পর বছর লড়াই চালাতে গিয়ে শহীদ হয়েছে হাজারো হামাস যোদ্ধা। তবু ইহুদিদের কাছে মাথা নত করেনি। বুক চেতিয়ে সমানতালে লড়াই করে যাচ্ছে। শহীদ হামাস যোদ্ধার রক্তবীজেই প্রতি মুহূর্তে গাজা উপত্যকায় জন্ম নিচ্ছে হাজারো হামাস। এ যেন মৃত্যুহীন এক প্রাণ।
গত সাত মাস ধরে গাজা উপত্যকাজুড়ে ইসরাইলের বিলিয়ন ডলারের হাইটেক বাহিনী আইডিএফের বিরুদ্ধে যেভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে হামাস যোদ্ধারা, তা গোটা বিশ্বের কাছে বিষ্ময়। এমনকি তেল আবিবও কোন কূলকিনারা করতে পারছে না। হামাস নির্মূলের স্বপ্ন এখন দেশটির কাছে সবচেয়ে বড় দুঃস্বপ্ন।
সেই অকুতোভয় হামাসই এবার জানালো, তারা অস্ত্র ছাড়তে রাজি। তবে এজন্য তারা একটি মাত্রই শর্তই জুড়ে দিয়েছে। আর সেটি হলো, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র। কারণ, এই একটি কারণেই তো যুগ যুগ ধরে লড়াই চালিয়ে আসছে হামাস যোদ্ধারা। ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের শর্তেই অস্ত্র ছেড়ে দিতে রাজি হামাস।
হামাসের অন্যতম নেতা খলিল আল-হায়া বুধবার মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়িত হলে তাদের গ্রুপ পাঁচ বছর বা তার বেশি সময়ের জন্য ইসরাইলের সাথে অস্ত্র বিরতিতে রাজি এবং তারা একটি রাজনৈতিক দলে রূপান্তরিত হতে চান।
তিনি বলেন, দখলদারদের বিরুদ্ধে লড়াইকারী সব মানুষের অভিজ্ঞতা হলো, যখন তারা স্বাধীনতা হাসিল করে এবং তাদের অধিকার এবং রাষ্ট্র অর্জন করে, তখন এসব বাহিনী কী করে? তারা রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়, তাদের আত্মরক্ষা বাহিনী- তখন জাতীয় সেনাবাহিনীতে পরিণত হয়।
আল-হায়া আরো বলেন, রাফাহতে ইসরাইলের পরিকল্পিত হামলাটি হামাসকে ধ্বংস করতে সফল হবে না। ইসরাইলি বাহিনী হামাসের ২০ ভাগ সক্ষমতাও ধ্বংস করতে পারেনি, লোকবল বা ময়দান, কোন দিক থেকেই নয়। উল্লেখ্য, হামাসের সামরিক শাখায় ৩০ হাজার যোদ্ধা রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
ইসরাইল যদি হামাসকে শেষ করতে না পারে, তবে কী হবে সমাধান? এমন প্রশ্ন রেখে হামাসের এই অন্যতম রাজনৈতিক নেতা বলেন, সমাধান হবে সমঝোতায় উপনীত হওয়া। হামাস পশ্চিম তীর ও গাজায় একটি পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি এবং ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনে আগ্রহী।
এদিকে, মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক গণমাধ্যম দ্য নিউ আরবকে হামাসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, হামাসের শীর্ষ নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার সম্প্রতি বেশ কয়েকবার টানেল থেকে বের হয়ে এসেছেন এবং সংশ্লিষ্ট এলাকায় মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। সেই সঙ্গে যোদ্ধাদের সঙ্গেও নানা বিষয়ে কথা বলেছেন।
ইয়াহিয়া সিনওয়ার ‘জনবিচ্ছিন্ন’ হয়ে পড়েছেন বলে তেল আবিব যে দাবি করেছে তা নাকচ করে দিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কর্মকর্তা বলেন, সিনওয়ার গাজায় সম্প্রতি দখলদার ইসরাইলি সেনাদের বিরুদ্ধে এক তুমুল সংঘর্ষের সময় হামাস যোদ্ধাদের সঙ্গে ঘটনাস্থলেই ছিলেন এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, একজন নেতা হিসেবে তিনি তার দায়িত্ব যথাযথ পালন করছেন এবং প্রতিরোধ আন্দোলনের মনোবল তুঙ্গে রয়েছে। সিনওয়ার সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর তথ্য ইহুদিবাদী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তার অপরাধী সংস্থাগুলো প্রচার করে। কারণ তারা নিজেদের ব্যর্থতাকে ধামাচাপা দিতে চায়।