বছরের পর বছর দাঁতে দাঁত চেপে তিক্ত এক স্বীকারোক্তি দিয়ে যেতে হচ্ছে ইসরাইলের সমর নেতাদের; আর তা হলো- হামাস সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে জানে। সম্পূর্ণ প্রস্তুত হবার আগ পর্যন্ত নিজেকে সম্বরণ করো- এই মূলমন্ত্রকে সামনে রেখেই এগিয়ে যায় হামাস। আর গেলো আট মাসে যেন সেই চিত্র আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনই নিত্যনতুন এক হামাসকে দেখছে ইসরাইলের সেনারা।
গাজার দক্ষিণে মিশরীয় সীমান্তের রাফাহ শহরে যখন সব লটবহর নিয়ে ইসরাইলি সেনারা অভিযানের জন্য যাত্রা শুরু করতে যাবে, ঠিক তখনই গাজার উত্তরে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছেন হামাসের যোদ্ধারা। গাজার উত্তরে জেইতুন ও জাবালিয়া এলাকায় ইসরাইলি বাহিনীর বিরুদ্ধে দুর্দান্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে হামাস যোদ্ধারা। সমন্বিত যুদ্ধ ইউনিট নিয়ে ইসরাইলি বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণে যাচ্ছে তারা।
ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে গাজায় হামাসের সঙ্গী হয়েছে ইসলামিক জিহাদর কমান্ডোরা। সেই সঙ্গে আরও ক্ষেপেছে লেবাননভিক্তিক সামরিক গোষ্ঠি- হিজবুল্লাহ। তাদের বিপজ্জনক সব আক্রমণে এখন ত্রাহি মধুসুধন অবস্থা ইসরাইলি সেনাদের। ফিলিস্তিনি ভাই-বোনদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসরাইলকে গাজা ছাড়তে প্রতিদিনই ভয়ঙ্কর সব হামলা চালাচ্ছে হাসান নাসরুল্লাহর শিষ্যরা। ছারখার হচ্ছে ইসরাইলি ঘাঁটি।
টাইমস অব ইসরাইল বিভিন্ন প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বৃহস্পতিবারে গাজায় সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় দুঃস্বপ্নের একটি দিন কাটিয়েছে। গাজার উত্তর হামাসের যোদ্ধারা যেমন তুমুল প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে, ঠিক সমানভাবেই লেবানন সীমান্ত থেকে ইসরাইলের ভেতরে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে হিজবু্ল্লাহ। এর মধ্যেই নিজেদের যুদ্ধবিমান থেকে নিজেদের সামরিক এলাকাতেই বোমা ফেলেছে ইসরাইল।
আইডিএফ বলছে, শুক্রবার সকালে একটি আধা টন বোমা একটি যুদ্ধবিমান থেকে পড়ে গিয়ে গাজা সীমান্তে ইয়াতেদ সম্প্রদায়ের একটি এলাকায় পড়ে যায়। তবে বোমাটি বিস্ফোরিত হয়নি। ঘটনাটিকে অস্বাভাবিক বলে হিসাবে বর্ণনা করেছে ইসরাইলি বাহিনী। যুদ্ধবিমানটি রাফাহ শহরে হামলা চালিয়ে ফেরার সময় এমন ‘সেইম সাইড’ ঘটনাটি ঘটিয়েছে। অবিস্ফোরিত অস্ত্রটি ইসরাইলি বাহিনী সংগ্রহ করেছে।
এমন ঘটনা আরও ঘটেছে। আইডিএফ জানিয়েছে, স্থানীয় সময় শুক্রবার ভোরে একটি ইসরাইলি সামরিক ড্রোন উত্তরাঞ্চলীয় মাজদাল শামস শহরে বিধ্বস্ত হয়েছে, প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে ড্রোনটি আকাশ থেকে পড়ে যায় বলে দাবি করা হচ্ছে। ড্রোনটি স্থলভাগে সামরিক চলাচল নজরদারির কাজে ব্যবহার করা হচ্ছিল। হামাসের দাবি, স্কাই রাইডার হিসাবে পরিচিত ড্রোনটি তাদের রকেটের আঘাতে বিধ্বস্ত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার, উত্তর গাজার জাবালিয়া শহরের কেন্দ্রস্থলে হামাসের শক্ত ঘাঁটিতে ইসরাইল প্রবেশ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। সেখানে ইসরাইলি ট্যাংকগুলো ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ও অন্যান্য প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। সেগুলোকে লক্ষ্য করে ট্যাংকবিধ্বংসী রকেট এবং বোমা হামলা চালিয়েছেন প্রতিরোধ যোদ্ধারা। ইসরাইলি ট্যাংক ধ্বংসের নতুন ভিডিও প্রকাশ করেছে হামাস।
গাজা উপত্যকায় শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে হামাসের সশস্ত্র শাখা এবং তার মিত্র ইসলামিক জিহাদ। উভয় গোষ্ঠীই তাদের ভারী সুরক্ষিত সুড়ঙ্গ ব্যবহার করে আক্রমণ চালাচ্ছে। গাজার নতুন যুদ্ধক্ষেত্র এখন রাফাহ শহর। সেখানে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। তবে শহরটিতে কোনও অগ্রগতি করতে পারেনি সেনারা। শহরটির বেশিরভাগ সুড়ঙ্গই এখনও অক্ষত বলে দাবি করেছে হামাস।
অন্যদিকে ইসরাইলের ভেতরে আরও বড় পরিসরে হামলা চালিয়েছে লেবাননের শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। শুক্রবার আইডিএফ জানিয়েছে, ইসরাইলকে লক্ষ্য করে ৭৫টি রকেট ছুড়েছে গোষ্ঠিটি। কয়েক ডজন রকেট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোম ভূপাতিত করেছে। বেশ কয়েকটি রকেট ইসরাইলের স্পর্শকাতর সামরিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। এতে ১৪ সেনা আহত হয়েছে।
টাইমস অব ইসরাইল জানিয়েছে, বুধবার সন্ধ্যায় হিজবুল্লাহ একটি বিস্ফোরক ড্রোন দিয়ে লোয়ার গ্যালিলির একটি স্পর্শকাতর সামরিক স্থাপনায় হামলা চালাতে সক্ষম হয়েছে। চলমান যুদ্ধে ইসরাইলের উত্তরাঞ্চল লক্ষ্য করে হিজবুল্লাহ যেসব হামলা চালিয়েছে সেগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম বড় ছিলো। হিজবুল্লাহ দাবি করেছে, তারা ইসরাইলি বিমান বাহিনীর একটি ঘাঁটিতে বিস্ফোরকবাহী ড্রোন নিক্ষেপ করেছে।